পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত বিভাস অধিকারী এবার উত্তর প্রদেশের নয়ডায় একটি ভুয়ো তদন্তকারী সংস্থা খুলে বড়সড় প্রতারণার ফাঁদ পাতার চেষ্টা করার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। নয়ডার সেক্টর ৭০-এ ‘ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন’ নামে একটি ভুয়ো অফিসের আড়ালে এই চক্রটি চালাচ্ছিল সে। রবিবার নয়ডা পুলিশ বিভাস-সহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে, যাদের প্রত্যেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৪ জুন এই অফিসটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল এবং মাত্র ১০ দিন আগেই কাজ শুরু করেছিল। অফিসের সাইন বোর্ডে থানার মতো রঙ ও লোগো ব্যবহার করা হয়েছিল যাতে সাধারণ মানুষ সহজে একে একটি আসল তদন্তকারী সংস্থা বলে মনে করে। এই প্রতারক চক্রটি ভুয়ো আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড এবং অন্যান্য জাল শংসাপত্র ব্যবহার করে তোলাবাজি করত। উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রক, আয়ুষ মন্ত্রক এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের জাল শংসাপত্রও তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এমনকি, তারা নিজেদেরকে ইন্টারপোল এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের দ্বারা স্বীকৃত বলেও দাবি করত।
www.intlpcrib.in নামে একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করা হয়েছিল এই প্রতারণার জন্য। পুলিশ ওই অফিস থেকে মোবাইল ফোন, চেকবই, ১৬টি রাবার স্ট্যাম্প, বিভিন্ন আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, লেটারহেড, একাধিক ATM কার্ড এবং নগদ ৪২,৩০০ টাকা উদ্ধার করেছে। বিভাস অধিকারী ছাড়াও তার ছেলে অর্ঘ্য, বাবুলচন্দ্র মণ্ডল, পিন্টু পাল, সমাপদ মাল এবং আশিস কুমারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কে এই বিভাস অধিকারী?
২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগ কেলেঙ্কারির তদন্তে বিভাস অধিকারীর বীরভূমের বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তল্লাশি চালিয়েছিল। যুব তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা কুন্তল ঘোষ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই এই বিভাস অধিকারীর নাম সামনে আসে। একসময় বেসরকারি বিএড এবং ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে সে কাজ করেছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী মানিক ভট্টাচার্য এবং অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর বিভাস তৃণমূল ছেড়ে ‘অল ইন্ডিয়া আর্য মহাসভা’ নামে একটি নতুন দল গঠন করেছিল।
গোয়েন্দাদের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগ কেলেঙ্কারির তদন্তের চাপ বাড়ার কারণে বিভাস তার ছেলে অর্ঘ্যকে নিয়ে উত্তর প্রদেশে পালিয়ে গিয়েছিল এবং সেখানে নতুন করে প্রতারণার ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করছিল। তবে খুব বেশিদূর এগোতে পারেনি। নতুন করে প্রতারণার জাল বিছানোর আগেই নয়ডা পুলিশের হাতে তার এই নতুন চক্রের পর্দা ফাঁস হয়ে গেল।