কলম্বিয়ায় এক অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মন্তব্যকে কার্যত সমালোচনা করলেন একজন প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিক। প্রাক্তন মার্কিন আধিকারিক রেমন্ড ভিকারি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের দলীয় অবস্থান ভুলে দেশের স্বার্থ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে বিশ্বমঞ্চে একসঙ্গে সওয়াল করা উচিত।
মার্কিন কূটনীতিকের অসন্তোষ
একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রেমন্ড ভিকারি বলেন, “আমি চাই ভারতীয় নেতারা, সরকারে থাকুন বা বিরোধী শিবিরে, দেশের স্বার্থে ও ভারতীয় মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলুন। এতে জাতীয় স্বার্থ আরও সুদৃঢ় হবে।” তাঁর মতে, আমেরিকায় রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলই যেমন বিশ্বমঞ্চে মার্কিন মূল্যবোধ তুলে ধরে, তেমনই ভারতেও সব দলের উচিত দেশের স্বার্থে একসঙ্গে সওয়াল করা। কিন্তু ভারতে এই একতা দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যায় না। তাঁর এই মন্তব্য যে রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই করা, তা স্পষ্ট।
ভিকারির বক্তব্য, রাজনৈতিক নেতাদের জাতীয় অগ্রাধিকারগুলিকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া উচিত।
কলম্বিয়ায় রাহুল গান্ধীর অভিযোগ
কলম্বিয়ার এনভিগাডোর ইআইএ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাহুল গান্ধী যে মন্তব্য করেছিলেন, তা হলো:
গণতন্ত্রের সংকট: তিনি অভিযোগ করেন, দেশে গণতান্ত্রিক কাঠামো পরিকল্পিতভাবে আক্রমণের মুখে।
বহুত্বের শক্তি: তিনি দাবি করেন, ভারতের শক্তি তার বহুত্বে—বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির সহাবস্থানেই দেশের প্রকৃত পরিচয়। গণতন্ত্রই একমাত্র পথ, যা সব কণ্ঠকে জায়গা দিতে পারে।
চিনের সঙ্গে তুলনা: রাহুল স্পষ্ট বলেন, চিন যা করে (মানুষকে দমন করে একনায়কতন্ত্র কায়েম) ভারত তা করতে পারে না, কারণ তা ভারতীয় কাঠামোর সঙ্গে মানায় না।
নোটবন্দি: তিনি ২০১৬ সালের ‘নোটবন্দি’কে ব্যর্থ বলে উল্লেখ করে এর দায় সরকারের বলে দাবি করেন।
রাহুল গান্ধী বলেন, দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা চলছে। বিরোধী শিবিরের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে এবং দুর্বলদের প্রতি আঘাত করা হচ্ছে।
পুরোনো অভিযোগ ও পালটা আক্রমণ
বিদেশের মাটি থেকে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে অভিযোগ তোলা রাহুলের জন্য এটি প্রথম ঘটনা নয়। এর আগে ২০২৩ সালে তিনি ব্রিটেন ও আমেরিকা সফরেও মোদী সরকারের আমলে গণতন্ত্রের সংকটের অভিযোগ তুলেছিলেন।
সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে আক্রমণ করে ‘দেশের অপমান’ করার অভিযোগ তুলেছিলেন। পাল্টা রাহুল প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী কেন বিদেশে গিয়ে দাবি করেছিলেন যে ৭০ বছরে ভারতে কিছুই হয়নি।
এই সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বিজেপি শিবির বরাবরই সরব। তাদের দাবি, কংগ্রেস বা তার কোনো নেতা দেশের বাইরে গিয়ে দেশের নামে বদনাম করে আসে এবং কলম্বিয়ার ঘটনাতেও তারা একই অভিযোগ করেছে।