‘বোরোলিন’ ছাড়া কি বাঙালির চলে? ১০০% স্বদেশী এই ‘ম্যাজিক ক্রিমের’ জন্ম হয়েছিল ১৯২৯ সালে— এর নাম কেন বোরোলিন জানেন?

‘বঙ্গ জীবনের অঙ্গ’ এবং শীতকালে পা-ঠোঁট ফাটার মুহূর্তে বাঙালির একমাত্র ভরসা— ‘সুরভিত অ্যান্টি সেপটিক ক্রিম বোরোলিন’। তবে জানেন কি, ১৯২৯ সালে দেশের আইন অমান্য আন্দোলনের উত্তাল সময়ে, সুদূর বিলেত থেকে আসা ক্রিমকে টক্কর দিতেই জন্ম হয়েছিল এই স্বদেশী ‘ম্যাজিক ক্রিমের’?

কলকাতার ব্যবসায়ী গৌরমোহন দত্ত সেই সময় জিডি ফার্মাসিউটিক্যালস শুরু করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট— এমন এক দেশীয় ক্রিম তৈরি করা, যা সাধারণ মানুষের জন্য হবে এবং যা বিদেশি পণ্যকে প্রতিযোগিতা দেবে। এক কথায় বলা যায়, বোরোলিনের হাত ধরেই বাংলা তথা গোটা ভারত যেন শিখেছিল ‘আত্মনির্ভরতা’।

কীভাবে এলো এই বোরোলিন নামটি?
বোরোলিনের ফর্মুলা সহজ হলেও অত্যন্ত কার্যকরী। এই ক্রিম তৈরি করা হয় তিনটি প্রধান উপাদানের মিশ্রণে:

১. বোরিক অ্যাসিড
২. জিঙ্ক অক্সাইড
৩. ল্যানোলিন

বোরোলিনের নামটি এসেছে ওই প্রধান উপাদানগুলি থেকেই: বোরিক অ্যাসিডের ‘বোরিক’ এবং ল্যানোলিনের ‘ওলিন’—এই দুইয়ের মিশ্রণে তৈরি হয় ‘বোরোলিন’। কাটা, পোড়া, পা বা ঠোঁট ফাটা ছাড়াও এটি সাধারণ চর্মরোগেও প্রাথমিক চিকিৎসার ভরসা।

স্বাধীনতার সঙ্গে গভীর যোগসূত্র
বোরোলিনের ইতিহাস দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। যে ক্রিমের উদ্ভাবনই হয়েছিল ব্রিটিশদের টক্কর দিতে, সেই ক্রিম দেশের স্বাধীনতার উদযাপনেও সঙ্গী হয়েছিল:

১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট, স্বাধীনতা লাভের দিনে জিডি ফার্মাসিউটিক্যালস কলকাতায় ১ লক্ষেরও বেশি বোরোলিন বিনামূল্যে বিতরণ করেছিল।

বোরোলিনের লোগোয় আজও একটি হাতির ছবি রয়েছে, যা শক্তির প্রতীক। প্রায় আট দশক ধরে এই লোগো বা বোরোলিনের সেই সবুজ অ্যালুমিনিয়ামের টিউবও (বর্তমানে প্লাস্টিকের কৌটোতেও পাওয়া যায়) বদলায়নি। এটিই বাঙালির নস্টালজিয়াকে ধরে রেখেছে।

সময়ের সঙ্গে জিডি ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রসার ঘটেছে। চাকবাগির ২০ একর জমিতে প্রথম কারখানা তৈরি হয় এবং পরে গাজিয়াবাদেও ইউনিট খোলে। বর্তমানে বাংলার এই ব্র্যান্ড ওমান, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশে পৌঁছে গিয়েছে। বোরোলিনের পর সুথল, গ্লোসফটের মতো পণ্য এলেও, ৯৫ বছর পরেও সংস্থার পরিচিতি সেই প্রিয় সবুজ টিউবের বোরোলিনই।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy