প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক পরামর্শদাতা পরিষদের সদস্য ও অর্থনীতিবিদ সঞ্জীব সান্যাল দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বিকশিত ভারত’ গঠনের স্বপ্নের পথে একমাত্র বাধা হলো দেশের বিচারব্যবস্থা। এই মন্তব্যের পরই সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ সিং তাঁকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন।
সান্যালের মন্তব্যে বিতর্ক
গত ১৯ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে সঞ্জীব সান্যাল বলেন, স্বাধীনতার ১০০ বছরে ভারতকে ‘উন্নত জাতি’ হিসেবে গড়ে তোলার উচ্চাভিলাষের পথে ‘সবচেয়ে বড় বাধা’ হলো ভারতের বিচারব্যবস্থা।
এছাড়াও, আদালতের ছুটির দীর্ঘ তালিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি:
“যে কোনও বিভাগের মতো দেশের বিচারব্যবস্থাও জনসেবায় নিয়োজিত। যদি ডাক্তাররা গ্রীষ্মকালীন ছুটি, দশেরা, শীতকালীন ছুটিতে হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে কী তা গ্রহণযোগ্য হবে? আদালতের জন্য কেন তা গ্রহণযোগ্য?”
সঞ্জীব সান্যালের এই মন্তব্যের পরই আইনমহলে বিতর্ক চরম আকার নেয়। তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়েরের উদ্যোগ নেন দুই আইনজীবী।
‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ মন্তব্য: সুপ্রিম কোর্টের জবাব
সঞ্জীব সান্যালের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ সিং বলেন, যাঁরা উচ্চ আদালতের কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানেন না, তাঁরাই ছুটি নিয়ে মন্তব্য করছেন।
বিকাশ সিং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই ধরনের মন্তব্য যিনি করছেন, তিনি বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতার প্রতি অসংবেদনশীল।” তিনি মনে করিয়ে দেন, একজন ব্যস্ত আইনজীবী বা বিচারক স্বাভাবিক সময়ে কী ধরনের কাজ করেন, তা না বুঝেই এমন মন্তব্য করা হচ্ছে।
সঞ্জীব সান্যাল আইনি ভাষায় ‘prayer’ এবং ‘My Lord’-এর মতো শব্দ ব্যবহারের সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, এই ধরনের শব্দই বিচারব্যবস্থাকে ভবিষ্যৎমুখী হতে বাধা দিচ্ছে। এর জবাবে বিকাশ সিং বলেন, এই ধরনের শব্দের ব্যবহার কেবল ঐতিহ্যের একটি অংশ এবং দীর্ঘদিনের অভ্যাস। তবে তিনি স্বীকার করেন, এই অভ্যাস বন্ধ করা দরকার।
উল্লেখ্য, এই প্রথম নয়, গত বছরও সঞ্জীব সান্যাল ‘তারিখ-পে-তারিখ’ ব্যবস্থা এবং আদালতের ছুটির ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করে বলেছিলেন, পঁচাত্তর বছর ধরে ঔপনিবেশিক আমলের একই ব্যবস্থাকে বয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়।