‘বাবার নৃত্যশৈলী অপভ্রংশ হচ্ছে’! উদয়শঙ্কর নৃত্যোৎসবে বিস্ফোরক মন্তব্য কন্যা মমতা শঙ্করের

নৃত্যশিল্পী, নৃত্য পরিকল্পক এবং অভিনেতা হিসেবে পরিচিত কিংবদন্তি শিল্পী উদয়শঙ্করের জন্মদিন ৮ ডিসেম্বর। তাঁর ১২৫তম জন্মদিনের প্রাক্কালে অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর, শান্তিনিকেতনে আয়োজিত হলো ‘উদয়শঙ্কর নৃত্যোৎসব’। এই উৎসবে অংশ নেন তাঁর কন্যা, বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্কর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে তিনি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন—তিনি মনে করেন, বাবার (উদয়শঙ্কর) নৃত্যশৈলীকে অপভ্রংশ করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ ডান্স গ্রুপ ফেডারেশনের উদ্যোগে শিল্পী উদয় শঙ্করকে শ্রদ্ধা জানাতে শান্তিনিকেতনের পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (EZCC) সৃজনী শিল্পগ্রামে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।

মমতা শঙ্করের বিস্ফোরক দাবি:

বাবা উদয়শঙ্করের স্মৃতিকথা শোনানোর পাশাপাশি মমতা শঙ্কর অভিযোগ করেন যে অনেকেই উদয় শঙ্করের নৃত্যধারা নিয়ে ঠিকমতো চর্চা করছেন না এবং ভুলভাবে সেটিকে পরিবেশন করছেন।

ইটিভি ভারতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন:

  • নৃত্যশৈলী জীবনবোধ: “এই উদয় শঙ্কর নৃত্যশৈলী যেন আমরা সকলে বাঁচিয়ে রাখতে পারি। কারণ এটা শুধুমাত্র একটা নৃত্যশৈলী নয়, এটা একটা জীবনবোধ। এটা একটা দর্শন। জীবনের সঙ্গে এক্কেবারে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই এই শৈলী রাখতে পারলে নাচের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনকে একটা জায়গায় বাঁধতে পারব।”

  • অপভ্রংশের অভিযোগ: উদয় শঙ্করের নৃত্যশৈলীকে অপভ্রংশ করা হচ্ছে কি না—এই প্রশ্নের উত্তরে মমতা শঙ্কর সরাসরি স্বীকার করেন, “সেটা তো হচ্ছে। অস্বীকার করব না।”

  • ‘খনির মতো’ নৃত্যধারা: তিনি আরও বলেন, “আমি এই বয়সে এসেও এখনও শিখছি। বাবার নৃত্যশৈলী একটা খনির মতো। সেটাকে যত খুঁড়ছি, গভীর থেকে আরও বেরোচ্ছে। তাই যাঁরা এই নৃত্যটাকে নিয়ে সেইরকমভাবে চর্চা করেননি, তাঁরা যদি এখন বলেন উদয় শঙ্করের নৃত্যটাকে একেবারে বুঝে গিয়েছেন, জেনে গিয়েছেন, সেটা মনে হয় বলাটা ভুল হবে।”

  • নতুন সৃষ্টির বার্তা: মমতা শঙ্কর বাবার পুরোনো কথার উল্লেখ করে বলেন, “আমার বাবা সব সময় বলে গিয়েছেন, আমি যে কয়েকটা মুভমেন্ট করে গিয়েছি, সেটাকেই উদয় শঙ্করের স্টাইল বলে বেঁধে রাখিস না। নতুন সৃষ্টি কর।”

উদয় শঙ্করের সম্মাননা:

১৯০০ সালের ৮ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ভারতীয় নৃত্য শিল্পের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র উদয় শঙ্কর। নৃত্য শিল্পে তাঁর অনবদ্য অবদানের জন্য তাঁকে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরষ্কার, সঙ্গীত নাটক একাদেমি ফেলোশিপ-সহ ১৯৭১ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে বিশ্বভারতী তাঁকে তাদের সর্বোচ্চ সম্মান ‘দেশিকোত্তম’ প্রদান করেছিল।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy