বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগরের প্রধান রাস্তার ওপর সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে বারো দুয়ারী গেট, যা আজও বর্ধমানের রাজ আমলের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। কিন্তু জানেন কি, এই ধরনের একটি নয়, মোট ১২টি গেট তৈরি করা হয়েছিল—যার মধ্যে ১১টিই কালের নিয়মে বিলীন হয়ে গেছে?
এই গেটের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে এক চরম প্রতিশোধ ও জয়ের কাহিনি, যা বর্ধমানের ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়।
১২টি গেট তৈরির কারণ
ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশ জানান, ১৭০০ সালে বর্ধমানের জমিদার ছিলেন জগতরাম রায়। সেই সময় মেদিনীপুরের চিতুয়াবরদার শাসক শোহা সিংহ তাঁকে আক্রমণ করেন। পরবর্তীতে কৃষ্ণসায়রে স্নান করার সময় শোহা সিংহের হাতেই নিহত হন জগতরাম রায়।
পিতার নির্মম হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন জগতরামের পুত্র কীর্তিচাঁদ রায়। পরবর্তী সময়ে শোহা সিংহ মারা গেলেও, কীর্তিচাঁদ তাঁর ভাই হিম্মত সিংহকে হত্যা করে প্রতিশোধ পূরণ করেন। পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সেই আনন্দকেই অমর করে রাখতে বর্ধমানের কাঞ্চননগরে অবস্থিত তাঁর রাজপ্রাসাদের চারিদিকে মোট ১২টি গেট তৈরি করেছিলেন কীর্তিচাঁদ রায়। এই গেটগুলোই ছিল তাঁর জয়ের প্রতীক।
দামোদরের গ্রাসে বিলীন হলো ১১টি গেট
তবে কাঞ্চননগর এলাকাটি ছিল বর্ধমান শহরের সবচেয়ে নিচু এলাকায়। ফলে সেই সময় দামোদর নদের জল প্রায়শই এই এলাকায় ঢুকে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করত।
বন্যার ভয়াবহতা এবং কালের নিয়মে পূর্ব দিকের গেটগুলি ধীরে ধীরে দামোদরের গর্ভে চলে যায়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে একটি গেট পুরোপুরি এবং একটির অর্ধাংশ অবশিষ্ট ছিল। সেই টিকে থাকা গেটটি ১৯১৫ সালে রাজা বিজয় চাঁদ মেহতাব সংস্কার করেছিলেন।
আজ, ১১টি গেট বিলীন হলেও, কাঞ্চননগরের বারো দুয়ারী গেটটি আজও সেই প্রতিশোধ, জয় এবং ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।