পাহাড়, জঙ্গল আর নদীর কোলে অবস্থিত নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের ডুয়ার্স গত কয়েক বছর ধরে দ্রুত ফিল্ম ট্যুরিজমের কেন্দ্র হয়ে উঠছিল। ‘খাদ’, ‘ল্যাপটপ’, ‘শব্দ’, ‘প্রধান’-এর মতো বাংলা সিনেমা থেকে শুরু করে রজনীকান্ত, করিনা কাপুর-জয়দীপ অহলাওয়াতের মতো তারকাদের নিয়ে ‘পাতাললোক’, ‘জানে জান’-এর মতো ওয়েব সিরিজের শ্যুটিংও হয়েছে এই অঞ্চলে। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যা ও ধস বিপর্যয় সেই ক্রমবর্ধমান ফিল্ম ট্যুরিজমে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত শ্যুটিং স্পট, বাতিল হচ্ছে কাজ:
গরুমারা, গরুবাথান, লাভা, ঝালং, বিন্দু, চাপরামারি এবং জলদাপাড়ার মতো বহু জনপ্রিয় শ্যুটিং স্পট বৃষ্টি ও ধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাবে একের পর এক সিনেমা ও ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং পিছিয়ে যাচ্ছে বা বাতিল হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম লাইন প্রোডিউসার চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বহু শ্যুটিং বাতিল হওয়ার কারণে তাঁরা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন। তিনি জানান, অভিনেতা শরমন যোশী আপাতত এই দুর্যোগের কারণে ডুয়ার্সে আসবেন না বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও যশরাজ ফিল্মস তাদের একটি বড় শ্যুটিং বাতিল করেছে। নিরমা এবং ভেসলিনের মতো বাণিজ্যিক সংস্থার শ্যুটিংও দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে বাতিল করা হয়েছে।
আর্থিক সংকটে স্থানীয় অর্থনীতি:
ফিল্ম শ্যুটিংয়ের সঙ্গে স্থানীয় অর্থনীতি গভীরভাবে যুক্ত। রিসর্ট ও হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে গাড়ি ভাড়া এবং স্থানীয় কর্মীদের কর্মসংস্থান—সবকিছুতেই এর প্রভাব পড়ে। রিসর্ট ম্যানেজাররা জানাচ্ছেন, তাদের একের পর এক বুকিং বাতিল হচ্ছে। গরুমারা জঙ্গল ক্যাম্পের ম্যানেজার আজাদ জানান, “আমাদের রিসর্টে এক কোমর জল উঠে এসেছিল, ফলে আপাতত কেউ আসতে চাইছেন না।”
গাড়ির চালক মনোহর ঠাকুর বলেন, “আমাদের একের পর এক বুকিং বাতিল হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় সমস্যা আরও বেড়েছে।”
ফিল্ম ট্যুরিজম স্থানীয় মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতায় বড় ভূমিকা রাখে। এই সাময়িক বাধা বহু মানুষের জীবিকাকে সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এখন উত্তরবঙ্গ কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে এবং ফিল্ম ট্যুরিজম আবার কবে গতি পাবে, তার অপেক্ষায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।