ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত ভারতীয়দের জন্য দুঃসংবাদ! Google Pay, PhonePe-এর মতো জনপ্রিয় ইউপিআই (UPI) পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের উপর এবার ব্যাঙ্ক চার্জ বসাতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই বেসরকারি খাতের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক আইসিআইসিআই (ICICI) ব্যাংক এই চার্জ কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে, যা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, বাকি ব্যাংকগুলোও অচিরেই একই পথে হাঁটতে পারে। এর মানে, এতদিন ধরে যে বিনামূল্যে অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা উপভোগ করা যাচ্ছিল, সেই দিন হয়তো শেষ হতে চলেছে।
কতটা চার্জ দিতে হবে?
আইসিআইসিআই ব্যাংক জানিয়েছে, ইউপিআই ডিজিটাল পেমেন্টে তারা প্রতি ১০০ টাকায় ২ পয়সা করে চার্জ নেবে। তবে এই চার্জের একটি সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ৬ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে, যাদের এসক্রো অ্যাকাউন্ট নেই, তাদের ক্ষেত্রে প্রতি লেনদেনে এই চার্জ ১০ টাকা পর্যন্তও পৌঁছতে পারে। উল্লেখ্য, এসক্রো অ্যাকাউন্ট হলো একটি নিরাপদ তৃতীয় পক্ষের দ্বারা পরিচালিত বিশেষ অ্যাকাউন্ট, যেখানে লেনদেনের অর্থ বা সম্পদ সাময়িকভাবে রাখা হয় যতক্ষণ না উভয় পক্ষের মধ্যে নির্ধারিত শর্তগুলি পূরণ হয়।
তবে, আইসিআইসিআই ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যদি লেনদেন হয়, অর্থাৎ মার্চেন্ট যদি আইসিআইসিআই ব্যাংকের গ্রাহক হন এবং তার অ্যাকাউন্টে সরাসরি ইউপিআই লেনদেন করা হয়, তাহলে গ্রাহকদের কোনো চার্জ দিতে হবে না।
কেন হঠাৎ এই চার্জ?
গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় থেকে, ইউপিআই পেমেন্ট ভারতের ডিজিটাল লেনদেনের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে ইউপিআই পেমেন্ট এক মাসে ২৫ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন ছুঁয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ লেনদেন সামলাতে এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে ইউপিআই পেমেন্টের পরিকাঠামোতে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, এই বর্ধিত খরচ মেটাতেই ব্যাংকগুলো এখন ইউপিআই লেনদেনের উপর চার্জ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো, আইসিআইসিআই ব্যাংকের পর যদি দেশের বাকি ব্যাংকগুলোও ইউপিআই লেনদেনে চার্জ বসানো শুরু করে, তাহলে এই চার্জের বোঝা শেষ পর্যন্ত কাকে বহন করতে হবে – গ্রাহককে নাকি মার্চেন্টকে? বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।
পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটরদের উপর প্রভাব
ব্যাংকের এই নতুন পদক্ষেপ পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটরদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এতদিন পর্যন্ত তারা অন্যান্য পরিষেবা থেকে আয় করে ইউপিআই লেনদেনের খরচ কিছুটা ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন ব্যাকএন্ডের খরচ (ব্যাকএন্ড চার্জ) বেড়ে যাওয়ায়, ব্যবসায়ীদের এই খরচ থেকে বাঁচিয়ে রাখা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। এর ফলস্বরূপ, ভবিষ্যতে হয়তো পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটররা তাদের পরিষেবার দাম বাড়াতে পারে, মার্চেন্টদের সঙ্গে নতুন করে দর কষাকষি করতে পারে, অথবা রাউটিং-সেটেলমেন্টে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে পারে।
আইসিআইসিআই ব্যাংকের পাশাপাশি অ্যাক্সিস ব্যাংক ও ইয়েস ব্যাংকের মতো আরও কিছু বেসরকারি ব্যাংকও নাকি একই ধরনের চার্জ চালু করেছে। এই তিনটি ব্যাংক, আইসিআইসিআই-সহ, ইউপিআই পরিষেবায় দেশের সেরা পরিষেবা প্রদানকারীদের মধ্যে পড়ে এবং তারা লেনদেনের উভয় পক্ষ (যিনি টাকা দেন ও যিনি টাকা নেন) একটি বড় অংশ পরিচালনা করে।
শিল্প মহলের অনেকে মনে করছেন, এই নতুন চার্জের পেছনে হয়তো নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কিছু ‘ইশারা’ রয়েছে। এক পেমেন্ট কোম্পানির কর্মকর্তা বলেছেন, “ইউপিআই নেটওয়ার্ক ও ব্যাংকিং পরিকাঠামোয় ব্যাংকগুলি প্রচুর টাকা ঢেলেছে। এখন তারা যদি কোনো রাজস্ব মডেল খোঁজে, সেটা অস্বাভাবিক নয়।” এর ফলে, ডিজিটাল লেনদেনের ভবিষ্যৎ গতিপথ কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।