নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের দেওয়া প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের রায় খারিজ করে দিল ডিভিশন বেঞ্চ। দীর্ঘ আইনি জটিলতার পর এই রায় আসতেই হাইকোর্ট চত্বরে শিক্ষকরা ‘অসময়ের দোল’ উদযাপন করেন। SSC’র ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায়ের পর এই রায়কে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বড়সড় নৈতিক জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া:
এই রায় ঘোষণার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দুই দিনের জেলা সফরে বহরমপুরে ছিলেন। ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “কথায় কথায় চাকরি খেয়ে নেব, এটা ঠিক কাজ নয়। চাকরি দেওয়াটাই আমাদের কাজ, খেয়ে নেওয়া নয়। বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের আস্থা আছে। বিচারকরা যা সত্য পেয়েছেন, সেই বিচারই হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী এই রায়কে ‘সুবিচার’ আখ্যা দিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেন যে, ‘কথায় কথায় চাকরি খেয়ে নেওয়া’র সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া উচিত।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া আক্রমণ:
অন্যদিকে, এই রায়ের পর বর্ষীয়ান আইনজীবী ও তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (বর্তমানে বিজেপি সাংসদ) কাঠগড়ায় তোলেন। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, সিঙ্গল বেঞ্চের পূর্ববর্তী রায় ছিল ‘ত্রুটিপূর্ণ’ এবং ‘অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ’।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তিনটি মূল আইনি যুক্তি তুলে ধরেন:
-
৩২ হাজার শিক্ষকের নিয়োগে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আদালতে দাখিল করা হয়নি।
-
সিঙ্গল বেঞ্চ মামলকারীদের মূল আবেদনের বাইরে গিয়ে রায় দিয়েছিল।
-
দীর্ঘ ন’বছর চাকরি করার পর শুধুমাত্র সন্দেহের বশে কারও রুজিরুটিতে টান দেওয়া আইনত অন্যায্য।
প্রাক্তন বিচারপতিকে নিশানা করে তাঁর কটাক্ষ, “কোনও বিচারপতির যদি রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকে, তখন বিচারব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যায়, যা এক্ষেত্রে হয়েছিল। যাঁরা একসময় এঁকে ‘ভগবান’ বলে স্লোগান দিতেন, আজকের রায়ের পর তাঁরাই উল্টো সুরে কথা বলছেন।”