প্রশ্নপত্রে ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তিতে নিন্দার ঝড় রাজ্যে

‘সন্ত্রাসবাদী’ বিতর্কে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়: স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান, নিন্দার ঝড় রাজ্যে
মেদিনীপুর, ১০ই জুলাই, ২০২৫: মেদিনীপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (Vidyasagar University) এক ভয়াবহ বিতর্কের মুখে। ইতিহাস বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের প্রশ্নপত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ (Terrorist) বলে উল্লেখ করায় রাজ্যজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ১১ নম্বর প্রশ্নে লেখা হয়, “মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম কর, যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন?” এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজনীতিক, সাধারণ নাগরিক, ইতিহাসপ্রেমী এবং শহিদ পরিবারগুলি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

‘বিপ্লবী না সন্ত্রাসবাদী’? ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ
ব্রিটিশ আমলে ঔপনিবেশিক সরকার ভারতের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘টেররিস্ট’ বা সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করত। স্বাধীনতা লাভের ৭৫ বছর পরও একটি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রে সেই একই শব্দবন্ধের ব্যবহারকে ‘লজ্জাজনক’ এবং ‘নিন্দনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষানুরাগী ও শহিদ পরিবারগুলি।

স্বাধীনতা সংগ্রামী বিমল দাশগুপ্তের ছেলে রণজিৎ দাশগুপ্ত এই ঘটনাকে ‘ইতিহাসের নাম উজ্জ্বলকারী ব্যক্তিদের সম্পর্কে এমন শব্দপ্রয়োগ লজ্জার’ বলে অভিহিত করেছেন। ‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর সম্পাদক কিংকর অধিকারী মন্তব্য করেছেন, “বিষয়টি শুধুই ভুল নয়, এটি একটি নীতিগত বিপর্যয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত অবিলম্বে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।” এই ঘটনাকে ইচ্ছাকৃত ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা বলেও মনে করছেন অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া: টাইপিং ভুলের সম্ভাবনা
বিতর্কের মুখে পড়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, উপাচার্যের নজরে আনার পরই বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আগামীকালই তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়বে। প্রাথমিকভাবে, এটিকে টাইপিং বা অনুবাদের ভুল বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র: নিছক ভুল নাকি ঐতিহাসিক বোধের অভাব?
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে— এই ‘ভুল’ কি শুধুই প্রযুক্তিগত ত্রুটি, নাকি এর পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক বোধের গভীর অভাব? ইতিহাস বিভাগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে এমন প্রশ্ন কিভাবে তৈরি হলো, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ক্ষমা না চাইলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বেশ কিছু সংগঠন।

এই বিতর্ক একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তেমনই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের প্রতি নতুন প্রজন্মের শিক্ষায়তনগুলির দায়বদ্ধতা নিয়েও চিন্তাভাবনার অবকাশ সৃষ্টি করেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy