এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আন্দোলনকারী শিক্ষক রেজাউল হককে গ্রেফতার করা নিয়ে পুলিশ আদালতে তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশ রেজাউল হককে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করলে বিচারক তার ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এর পর আদালত রেজাউল হকের জামিন মঞ্জুর করে, যা রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দেওয়ার আগেই পুলিশ একটি অডিও টেপ প্রকাশ করে দাবি করে যে, আন্দোলনকারীরা হিংসাত্মক আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন। সেই অডিও টেপের ভিত্তিতেই মালদার শিক্ষক রেজাউল হককে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু আদালতে পেশ করার পর বিচারক বিধাননগর পূর্ব থানার আইসিকে একাধিক প্রশ্ন করেন।
বিচারক জানতে চান, “কীসের ভিত্তিতে গ্রেফতার করলেন, তারই তো উল্লেখ নেই। যে অডিও টেপ নিয়ে আপনারা এসেছেন, তাতে কার সঙ্গে কথোপকথন ছিল, তা কি চিহ্নিত করেছেন? এই মামলায় আপনারা সেনা, নৌবাহিনীর ধারা কেন যুক্ত করেছেন, যখন এখানে কোনো সেনা বা নৌসেনা মোতায়েন করা হয়নি?” বিচারক আরও বলেন, “আপনারা নিজেরাই কেস করছেন, কিন্তু কোনো সরকারি কর্মী বা পুলিশকে কি ভয় দেখানো হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।”
বিচারক অর্ঘ্য আচার্য পুলিশের আইসিকে সরাসরি বিএনএস (ভারতীয় ন্যায় সংহিতা)-এর বইটি হাতে দিয়ে ধারার সামঞ্জস্য বজায় রাখার কথা বলেন। তিনি বলেন, “জানি আপনারা চাপের মধ্যে কাজ করেন, কিন্তু ধারার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। যার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কথা হয়েছিল, তার সম্পর্কেও তো কিছু জানেন না। বিষয়টি খুব আকস্মিক।”
বিচারক ৭ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করে পুলিশের কাছে অডিও স্যাম্পল নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশ তখন জানায়, “এই মুহূর্তে ভয়েস স্যাম্পল নেওয়ার প্রয়োজন নেই, ভবিষ্যতে হলে আবেদন করা হবে।” এই কথা শুনে বিচারক বলেন, “তাহলে আপনারা এই মুহূর্তে ভয়েস স্যাম্পল নিচ্ছেন না, এটা উল্লেখ রেখে দিচ্ছি।”
আদালতের এই পর্যবেক্ষণের পর রেজাউল হকের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এর আগে যাদবপুরের প্রাক্তন ছাত্র হিন্দোল মজুমদারেরও জামিন মঞ্জুর হয়েছিল। এই দুটি ঘটনায় পুলিশের গ্রেফতারি প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।