এক ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পাকিস্তান কার্যত গৃহযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে যেমন আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তজুড়ে সামরিক সংঘর্ষ চলছে, তেমনই দেশের অভ্যন্তরে মৌলবাদী সংগঠন তেহরিক-ই-লাববাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) মিছিলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
১. টিএলপি সমর্থকদের মিছিলে সংঘর্ষ:
মৌলবাদী ইসলামপন্থী সংগঠন তেহরিক-ই-লাববাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) সমর্থকদের মিছিলে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন পুলিশ আধিকারিক-সহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। টিএলপি প্রধান সাদ হুসেন রিজভি-এর নেতৃত্বে এই মিছিলে ইজরায়েল বিরোধী ও প্যালেস্টাইনপন্থী বিক্ষোভ দেখানো হয়। একইসঙ্গে শাহবাজ শরিফের সরকারের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগড়ে দেন টিএলপি সমর্থকরা। অশান্তির আশঙ্কা থাকলেও ইসলামাবাদ থেকে মুরিদকে অবধি বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করেও এই বিক্ষোভ মিছিল রোখা সম্ভব হয়নি।
২. আফগানিস্তানের সঙ্গে ভয়ংকর সীমান্ত লড়াই:
অন্যদিকে, ভয়াবহ এক সীমান্ত লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনী। দুই দেশের সীমান্ত বরাবর একাধিক স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল এবং পাকতিকায় বিস্ফোরণের দুই দিন পর এই সংঘর্ষ শুরু হয়। তালিবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেছেন, আফগান বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন।
যদিও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই হামলায় ২৩ জন সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তবে তারা দাবি করেছে, তাদের পাল্টা হামলায় তালিবান এবং এর সঙ্গে যুক্ত ২০০ ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটিকে ‘বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণ’ আখ্যায়িত করেছেন।
৩. টিটিপি ও বালুচিস্তানের চাপ:
২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর জঙ্গি হামলা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে যে তালিবান প্রশাসন টিটিপি জঙ্গিদের আফগান ভূখণ্ডে নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধান মাথাব্যথা হিসেবে বছরের পর বছর ধরে রয়েছে স্বাধীন বালুচিস্তানের দাবিতে আন্দোলনকারী বালুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) এবং বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। অভ্যন্তরীণ এই সব বিদ্রোহ দেশের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।