পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরের ঐতিহ্যবাহী পাথরঘাটা পঞ্চপাণ্ডব ঘাট আজও বহন করে চলেছে পাঁচ শতাব্দীরও বেশি পুরনো এক অমূল্য স্মৃতি। কেলেঘাই নদীর তীরে অবস্থিত এই ঘাটটিই ছিল সেই ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে শ্রীচৈতন্যদেব নীলাচল (পুরী) যাত্রার সময় নদীপথে প্রথম পা রেখেছিলেন এবং অধুনা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রবেশ করেছিলেন।
শ্রীচৈতন্যদেবের আগমন ও পবিত্র স্মৃতি
আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক বীরকুমার শী’র তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৫১০ খ্রিস্টাব্দের দিকে শ্রীচৈতন্যদেব নীলাচল গমনের পথে নৌকাযোগে অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং এলাকা থেকে কেলেঘাই নদী পার হয়ে এই পাথরঘাটায় এসে পৌঁছান।
-
বিশ্রামস্থল: এই নদী পথ ধরে আসার পর নদীর ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা কঙ্কেশ্বর মহাদেবের মন্দির ছিল শ্রীচৈতন্যদেবের বিশ্রামস্থল। তিনি ঠিক এই স্থানেই বিরতির জন্য থেমেছিলেন।
-
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: যদিও সেই সময় মেদিনীপুর জেলার বর্তমানের মতো ভাগ বিভাজন ছিল না, তবুও এই এলাকায় তাঁর সেই ঐতিহাসিক আগমন আজও স্থানীয় মানুষের স্মৃতি, বিশ্বাস ও ভক্তিভাবকে সমানভাবে উজ্জীবিত করে রেখেছে।
-
স্থানীয় বিশ্বাস: পাথরঘাটা গ্রামের মানুষ আজও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে এই ঘাটেই যেন শ্রীচৈতন্যদেব জীবিত রয়েছেন এবং তাঁর পদস্পর্শে এই স্থানটি পবিত্র হয়ে উঠেছে।
ইতিহাসবিদদের মতে, শ্রীচৈতন্যদেবের এই যাত্রা ছিল তাঁর ভক্তি ও ধর্ম প্রচারের প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাই এই ঘাটের গুরুত্ব শুধু ভৌগোলিক নয়, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ভাবেও অত্যন্ত মূল্যবান।
সময়ের পরিবর্তন সত্ত্বেও স্মৃতি অম্লান
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পরিবর্তন এসেছে—মেদিনীপুর জেলা পূর্ব ও পশ্চিমের প্রশাসনিক বিভাজনে ভাগ হয়েছে, গ্রামের চেহারা বদলেছে—কিন্তু এই ঘাটের স্মৃতি আজও একই রয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় মানুষের কাছে তাই পাথরঘাটা পঞ্চপাণ্ডব ঘাট শুধু একটি সাধারণ নদীর ঘাট নয়—এটি শ্রীচৈতন্যদেবের ঐতিহাসিক পদচিহ্নের অমূল্য স্মৃতি বহন করা এক পবিত্র স্থান।