পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো নাম বাদ দেওয়ার জন্য ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (SIR) বা ‘স্যর’ পদ্ধতি চালু করার তোড়জোড় চলছে, যা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক তুঙ্গে। সোমবার এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরকে ঘিরে এক বড় পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে।
কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরকে একটি স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গত ১৭ই জুলাই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের পক্ষ থেকে এই মর্মে একটি চিঠি নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের কাছে এসে পৌঁছেছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
চিঠিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্তমানে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের হাতে নিজস্ব আর্থিক ক্ষমতা নেই। তারা রাজ্যের অর্থ দফতর থেকে প্রাপ্ত সামান্য স্থায়ী অগ্রিমের উপর নির্ভর করে কাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এই দফতরকে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক (নির্বাচন) দফতরের অধীনস্থ শাখা হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেখানে একজন প্রধান সচিব পদমর্যাদার আধিকারিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ, সিইও নিজে অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (এসিএস) পদমর্যাদার আধিকারিক। কমিশনের মতে, সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সিইও-র স্বাধীনতার পরিপন্থী।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২রা এপ্রিল মনোজ কুমার আগরওয়াল (আইএএস) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই এই বিষয়টি গুরুত্ব পেতে শুরু করে। পরে ৩রা এপ্রিল একটি সংশোধিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁকে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক (নির্বাচন) দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব হিসেবেও নিযুক্ত করা হয়। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয় যে, এই দ্বৈত ভূমিকা সিইও-র স্বাধীনতা ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্পষ্ট অসঙ্গতি তৈরি করছে।
নির্বাচন কমিশনের পাঠানো চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অবিলম্বে একটি স্বাধীন নির্বাচন দফতর গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা অন্য কোনো দফতরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না এবং যার নিজস্ব বাজেট থাকবে। এর ফলে সিইও প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পারবেন। একই সঙ্গে কমিশন নির্দেশ দিয়েছে যে, সিইও-কে সচিব, প্রধান সচিব বা অতিরিক্ত মুখ্য সচিব স্তরের উপযুক্ত আর্থিক ক্ষমতা দিতে হবে এবং একজন আলাদা আর্থিক উপদেষ্টাকে নিয়োগ করতে হবে, যিনি নির্বাচন সংক্রান্ত দফতরে সিইও-কে সহযোগিতা করবেন।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন আরও নির্দেশ দিয়েছে যে, সিইও-র দফতরে চারটি অতিরিক্ত, যুগ্ম বা উপ-মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের পদ শূন্য রয়েছে, সেগুলি দ্রুত পূরণ করতে হবে এবং এই বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে পদক্ষেপ করতে হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনার প্রস্তুতি ও সমন্বয় কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতেই এই পদক্ষেপগুলি জরুরি।
চিঠির একটি অনুলিপি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককেও পাঠানো হয়েছে। এই নির্দেশকে নির্বাচন কমিশনের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য দেশের প্রতিটি রাজ্যে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলির কাঠামোগত স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা আরও জোরদার করা।