নিউটাউনে স্বপ্নপূরণের দিশা, নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’ আবাসনের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ

অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নিউটাউনের বুকে এক বিশাল আবাসন প্রকল্পের শুভ সূচনা করল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’ নামে দুটি অত্যাধুনিক বহুতল আবাসনের উদ্বোধন করেন। এই উদ্বোধনী মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আবাসন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের কোনো আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে তীব্র আক্রমণে মুখর হন। তিনি স্পষ্ট জানান, “বাড়ি তৈরির জন্য কোনো অর্থ দেয় না কেন্দ্র। তাই রাজ্য নিজেই উদ্যোগ নিয়ে এই আবাসন প্রকল্প তৈরি করেছে। বাংলার উন্নয়নের জন্য আমরা কারও মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকব না।”

স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আধুনিক জীবনযাত্রা:

সাত একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই বিশাল আবাসন প্রকল্প মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের শহরের বুকে নিজের ফ্ল্যাটের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে। এখানে আধুনিক পরিকাঠামো, সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্ল্যাট, নিরাপদ ও সবুজ পরিবেশ, শিশুদের জন্য পার্ক এবং বিনোদনের উন্নত সুবিধা থাকবে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে বহু সাধারণ মানুষ উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগ পাবেন।

‘নিজন্ন’ প্রকল্পে থাকছে ছোট পরিবারের জন্য আদর্শ ৪০ বর্গফুটের ৪১০টি ওয়ানবিএইচকে ফ্ল্যাট। অন্যদিকে, ‘সুজন্ন’ প্রকল্পে ৬২০ থেকে ৭৩০ বর্গফুটের ৭৩০টি টুবিএইচকে ফ্ল্যাট থাকবে, যা মাঝারি আকারের পরিবারের জন্য উপযুক্ত। সব মিলিয়ে মোট ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১,২১০টি। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এই ফ্ল্যাটগুলি লটারির মাধ্যমে বিক্রি হবে এবং বাজারদরের তুলনায় অনেক কম দামে পাওয়া যাবে। ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’ তৈরিতে মোট খরচ হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা, যার সম্পূর্ণ জমি রাজ্য সরকার বিনামূল্যে প্রদান করেছে।

শুধু আবাসন নয়, জীবনযাত্রার মানোন্নয়নও লক্ষ্য:

আবাসনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন অত্যাধুনিক বহুতল পার্কিং কমপ্লেক্স ‘সুসম্পন্ন’-এরও উদ্বোধন করেন। রাজারহাটে নির্মিত এই আটতলা পার্কিং লটে প্রায় ১৫০০ গাড়ি রাখা যাবে এবং এখানে সর্বাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এর মাধ্যমে নিউটাউনে যানজট কমানো এবং পার্কিং সমস্যার সমাধানে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের দিকে নজর দিয়ে শিশুদের জন্য থাকছে ‘তরন্ন’ নামে একটি বিনোদন পার্ক, মুক্তমঞ্চ, সবুজ উদ্যান, ক্যাফেটেরিয়া, ফুড কোর্ট এবং মর্নিং ওয়াকের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা।

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, রাজ্যের আত্মনির্ভরতার বার্তা:

আবাসনের খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ উগড়ে দেন। তিনি বলেন, “আমরা ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে ৪৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি করেছি। কিন্তু কেন্দ্র টাকা দেয়নি। তাই নিজেরা খরচ করেই এই আবাসন গড়ে তুলেছি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের অসহযোগিতার কারণে রাজ্যের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প থমকে রয়েছে। তবে এই সমস্ত বাধা সত্ত্বেও রাজ্য থেমে থাকবে না, তারই প্রমাণ এই ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’ প্রকল্প – এমনটাই বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই প্রকল্প একদিকে যেমন রাজ্যের আবাসন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, তেমনই এটি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগের মুখে রাজ্যের নিজস্ব উদ্যোগে উন্নয়নের এক বড় প্রতীক হয়ে উঠেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy