সামনেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন, আর তার আগে পূর্ব মেদিনীপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। বিশেষ করে শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক নন্দীগ্রামকে পাখির চোখ করে, সমবায় নির্বাচন ঘিরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার পরই তড়িঘড়ি সাংগঠনিক রদবদল আনল রাজ্যের শাসক দল। মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই তমলুক সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়কে, তার স্থলাভিষিক্ত হলেন তৃণমূলেরই প্রাক্তন জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাস দেড়েক আগেই চিত্তরঞ্জন মাইতিকে সরিয়ে দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়কে তমলুক সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি নন্দীগ্রাম এবং সংলগ্ন এলাকার সমবায় নির্বাচনগুলিতে দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। মূলত তৃণমূলের জেতা সমবায়গুলিতে ডিরেক্টর পদ বণ্টন নিয়েই দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। তমলুকের বিধায়ক চঞ্চল খাঁড়ার সঙ্গে তমলুক পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের যে সংঘাত চলছিল, তা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সূত্রের খবর, এই কারণেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই আকস্মিক রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অপসারিত নেতার হতাশা, নতুন নেতার অঙ্গীকার:
পদ থেকে অপসারিত হয়ে দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় তার হতাশা গোপন করেননি। তিনি বলেন, “দলের কাছে আমি কোনোদিন পদ চাইতে যাইনি। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। খারাপ লাগলেও দলের সিদ্ধান্তই মেনে নিচ্ছি। কেন আমাকে সরানো হলো জানি না। নিজের মূল্যায়ন তো নিজে করতে পারব না। যাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারাই বলতে পারবেন।”
অন্যদিকে, তমলুক সাংগঠনিক জেলার নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, “সবাইকে নিয়ে দলকে সাফল্য এনে দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি আশাবাদী মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই মত দেবেন। আমরা সবাই কোমর বেঁধে নামলে দলকে ঠিক সাফল্য এনে দিতে পারব।”
এই রদবদল স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, তৃণমূল কংগ্রেস পূর্ব মেদিনীপুর এবং বিশেষ করে নন্দীগ্রামে নিজেদের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে একজোট হয়ে কাজ করতে চাইছে। অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দল আগামী দিনে কতটা সাফল্য পায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।