ভারতে প্রবাহিত ছোট-বড় প্রায় ৪০০টি নদীর ভিড়ে গঙ্গা, যমুনা বা নর্মদার নাম তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রাণরেখা ব্রহ্মপুত্র যেন সবার চেয়ে আলাদা। একে তো অধিকাংশ নদীকে ‘স্ত্রীলিঙ্গ’ ধরা হলেও ব্রহ্মপুত্রকে বলা হয় ‘নদ’, তার ওপর এই নদকে ঘিরেই রয়েছে এক অদ্ভুত রহস্য। আপনি কি জানেন, ব্রহ্মপুত্রকে ভারতের ‘লাল নদী’ (Red River) বলা হয়?
কেন লাল হয় ব্রহ্মপুত্রের জল?
বর্ষাকালে যখন আকাশভাঙা বৃষ্টি নামে, তখন ব্রহ্মপুত্রের জলের রঙ অনেক জায়গায় লাল হয়ে যায়। অনেকে একে অলৌকিক মনে করলেও এর পেছনে রয়েছে এক অকাট্য বৈজ্ঞানিক কারণ:
মাটির গুণাগুণ: ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার আশপাশে থাকা পাহাড়ের মাটিতে প্রচুর পরিমাণে লৌহ বা আয়রন (Iron) রয়েছে।
প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া: বর্ষার সময় প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ের গা থেকে প্রচুর পরিমাণে মাটি ধুয়ে নদীতে মেশে। আয়রন সমৃদ্ধ এই লাল মাটি জলে মিশে যাওয়ার ফলেই নদীর জল টকটকে লাল রঙ ধারণ করে।
তিব্বত থেকে বাংলাদেশ: এক দীর্ঘ যাত্রা
তিব্বতের মানস সরোবরের কাছে জন্ম নেওয়া এই ব্রহ্মপুত্র ভারতের দুটি প্রধান রাজ্য— অরুণাচল প্রদেশ ও অসমের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর তা প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। উত্তর-পূর্ব ভারতের কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ এবং সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় ব্রহ্মপুত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
কেন এটি ‘নদ’?
পৌরাণিক এবং ব্যাকরণগত কারণে ব্রহ্মপুত্রকে ‘নদ’ বলা হয়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, একে ব্রহ্মার পুত্র মনে করা হয় (ব্রহ্ম + পুত্র), যা পুরুষবাচক। তাই গঙ্গা বা যমুনার মতো একে নদী না বলে নদ সম্বোধন করা হয়।
প্রকৃতির এই অদ্ভুত খেয়াল ব্রহ্মপুত্রকে কেবল ভারতের অন্যতম প্রধান জলভাগই করেনি, বরং পর্যটক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের কাছে করে তুলেছে এক পরম বিস্ময়।