ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং ঐতিহ্য পালনের এক বিরল দৃশ্য দেখা গেল পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানা চত্বরে। মহাষ্টমীর সন্ধিপূজা শেষ হওয়ার পর থানার ওসি মমতাজ শেখ নিজেই ঐতিহ্যের অঙ্গ হয়ে উঠলেন। তাঁর পরনে ছিল লাল ধুতি এবং স্যান্ডো গেঞ্জি। পুলিশি উর্দির বদলে দেবীর প্রতি শ্রদ্ধায় তিনি এভাবেই প্রস্তুত ছিলেন।
বান্দোয়ান দুর্গা মণ্ডপের পুজো এবার ৯০ বছরে পা দিল। ইংরেজ আমল থেকে চলে আসা এই পুজোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর নির্ভেজাল ভক্তি এবং কঠোর রেওয়াজ। এখানে থিমের আড়ম্বর নয়, ফুল, ধূপ, ধুনো আর ভক্তের শ্রদ্ধা দিয়েই আরাধনা হয়।
সন্ধিপূজার পর থানায় খাঁড়া!
এই পুজোর একটি অন্যতম রেওয়াজ হলো সন্ধিপূজার পর বলির জন্য ব্যবহৃত খাঁড়াটি থানায় নিয়ে যাওয়া। যদিও এখানে পশুবলি হয় না, বৈষ্ণব রীতিতে আখ বলি দেওয়া হয়।
বলি পর্ব মিটতেই পুজোর কর্মকর্তারা সাড়ে তিন ফুটের খাঁড়াটি নিয়ে পৌঁছান বান্দোয়ান থানায়। খাঁড়া আসার আগেই ওসি মমতাজ শেখ তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। খাঁড়াটি হাতে তুলে নিয়ে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে তিনি সেটির ওপর একটি নতুন গামছা জড়িয়ে দিলেন।
এভাবেই প্রতি বছর বান্দোয়ানবাসী সম্প্রীতি ও শান্তির বার্তা দেন।
“এটাই এলাকার রীতি, আমি পালন করলাম”
পুজো উদ্যোক্তারা জানান, এবার তাঁদের পুজোর বার্তাই হলো সম্প্রীতি। অন্যদিকে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও এই ঐতিহ্য পালনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা ছিল না ওসি মমতাজ শেখের।
ওসি মমতাজ শেখ বলেন, “আমি অন্য ধর্মে বিশ্বাসী। তাতে কোনো অসুবিধা নেই। এটাই এলাকার রীতি। আমি তা পালন করলাম।” তাঁর গলাতেও ঝরে পড়ল শ্রদ্ধার সুর। পুরুলিয়ার এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে ঐতিহ্যের প্রতি এই সম্মান প্রদর্শন গোটা রাজ্যের কাছে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করল।