বিজয়া দশমীর পর শহরে এখন বিসর্জনের সুর। ছোট পুজো কমিটিগুলির প্রতিমা নিরঞ্জন পর্ব চললেও, শহরের নামী পুজো কমিটিগুলি এখন আগামী বছরের দেবী দুর্গার আগমনীর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। ময়দানে নামী খেলোয়াড়দের চুক্তির মতো, কলকাতার বড় থিমের পুজো কমিটিগুলি এখন সেরা শিল্পীদের ধরে রাখার খেলায় নেমেছে।
মায়ের মূর্তি এখনও জলে না-পড়লেও, একাধিক পুজো কমিটি ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ২০২৬ সালের থিমের কাজ করা শিল্পীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছে।
কারা পেলেন পরের বছরের টিকিট?
এবারের সফল কাজের পর একাধিক পুজো কমিটি তাদের শিল্পীদের ওপর ভরসা রেখে পরের বছরের জন্য চুক্তি সেরে ফেলেছে:
নলিনী সরকার স্ট্রিট: একসময় যাঁর নামে একাধিক পুজো চিনতেন দর্শনার্থীরা, সেই শিল্পী সনাতন দিন্দা এবার আড়াল ভেঙে পুরনো কাজের জায়গায় ফিরেছিলেন। তাঁর নতুন ধরনের মণ্ডপ ও মাতৃ প্রতিমা দেখতে এবার জনতার ঢল উপচে পড়েছিল। ক্লাবকর্তারা ঘোষণা করেছেন, “আসছে বছর সঙ্গে ‘সনাতন’।” অর্থাৎ, আগামী বছর ফের নলিনী সরকার স্ট্রিট পুজোর থিম শিল্পী থাকছেন সনাতন দিন্দা।
কাশী বোস লেন: এই বছর লীলা মজুমদারের সৃষ্টিকে মণ্ডপে তুলে ধরে শিল্পী অনির্বাণ দাস কমিটির সুনাম বাড়িয়েছেন। পুরস্কার ও সম্মান পেয়ে আপ্লুত কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছেন, “আগামী বছরে সঙ্গে অনির্বাণ”।
চালতা বাগান সর্বজনীন: বাংলা ভাষা ও পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা মণ্ডপে তুলে ধরেছিলেন শিল্পী প্রদীপ্ত কর্মকার। তাঁকেই আগামী বছর আবার এই পুজোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
হিন্দুস্থান পার্ক: দক্ষিণ কলকাতার এই বিখ্যাত পুজো ঘোষণা করেছে, তাদের আগামী বছরের শিল্পী থাকছেন মলয় ও শুভময়।
এত আগে চুক্তি কেন?
পূজা কমিটিগুলি কেন এত দ্রুত শিল্পী নির্বাচন করছে, তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন শিল্পী ও ক্লাব কর্তারা:
শিল্পীর সুবিধা: শিল্পী সনাতন দিন্দা বলছেন, “এটা খুবই ভালো পদক্ষেপ। শিল্পী ও পুজো কমিটি, দুই পক্ষের কাজ করতে সুবিধা হয়। শিল্পীরাও সময় পান কোন জায়গায় কাজ করতে হবে, সেই মতো পরিকল্পনা করা যায়”।
কমিটির সুবিধা: চালতা বাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির কর্মকর্তা মৌসুম মুখোপাধ্যায় বলেন, “আগেভাগে করলে ভালো শিল্পীদের পাওয়া যায়। সেই শিল্পীকে ধরে রাখতেও সুবিধা। সেই শিল্পী এই পুজোর মধ্যে আগামী বছরের কাজকর্ম নিয়ে ভাবতে শুরু করে দেন। সোশাল মিডিয়ায় বলে দিলে, অন্য ক্লাব যারা একই জোনে আছে, তারা আর সেই শিল্পীকে নেয় না”।
এই দ্রুত চুক্তি প্রক্রিয়া প্রমাণ করে, পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজাকে ঘিরে এখন উৎসবের পাশাপাশি এক তীব্র প্রতিযোগিতা এবং পেশাদারিত্ব তৈরি হয়েছে।