লাদাখের পরিচিত সমাজকর্মী তথা গবেষক সোনম ওয়াংচুককে জাতীয় সুরক্ষা আইন (NSA)-এর আওতায় গ্রেফতার করার ঘটনায় তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর দ্রুত মুক্তির দাবিতে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমো। লাদাখ আন্দোলনে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গত শুক্রবার গ্রেফতার করা হয় সোনমকে। বর্তমানে তিনি রাজস্থানের যোধপুর জেলে আটক রয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টে আর্জি ও অভিযোগ
আইনজীবী সারভাম রিতম খাড়ের মাধ্যমে শীর্ষ আদালতে আর্জি জানিয়েছেন গীতাঞ্জলি। তাঁর আবেদনে স্বামীর দ্রুত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে এবং সোনমের বিরুদ্ধে কেন জাতীয় সুরক্ষা আইন (NSA) আনা হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
গীতাঞ্জলি অভিযোগ করেছেন, গ্রেফতারের এক সপ্তাহ পরেও তাঁর কাছে সোনমের শারীরিক অবস্থা এবং আটকের কারণ সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। তিনি স্বামীর দ্রুত মুক্তির দাবিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও তিন পাতার চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, গত চার বছর ধরে সাধারণ জনগণের স্বার্থকে সমর্থন করার জন্যই তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে এই কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে।
আন্দোলন ও সংঘর্ষের পটভূমি
লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত পাঁচ বছর ধরে লেহ অ্যাপেক্স বডি (LAB) ও কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (KDA) আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ সোনম ওয়াংচুক।
অনশন ও পদযাত্রা: গত বছর একই দাবিতে অনশন করেন সোনম। তাঁর নেতৃত্বে পায়ে হেঁটে ‘দিল্লি চলো’ পদযাত্রা করেন লাদাখবাসী।
লেহ রণক্ষেত্র: চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে একই দাবিতে সোনম পুনরায় অনশন শুরু করেন। এই আবহে ২৪ সেপ্টেম্বর লাদাখের রাজধানী লেহ-তে হঠাৎ বিক্ষোভ শুরু করে লাদাখের তরুণ সমাজ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় প্রচুর সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়।
খন্ডযুদ্ধ ও প্রাণহানি: বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। মোতায়েন করা হয় আধাসামরিক বাহিনীও। পুলিশ ও বাহিনীর সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে ৪ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ৯০ জন আহত হন।
সোনমকে দায়ী করল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ১৫ দিনের মাথায় সোনম ওয়াংচুক অনশন প্রত্যাহার করে বিক্ষোভকারীদের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান। তবে এই হিংসার ঘটনার জন্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ সোনমকেই দায়ী করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। অশান্তির ঘটনায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে দু’দিন পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং নিরাপত্তার খাতিরে তাঁকে যোধপুর জেলে রাখা হয়েছে।