“ক্লাস নাইনে বই দেখে দেখে পরীক্ষা দেবে পড়ুয়ারা”-২০২৬ সাল থেকেই চালু হচ্ছে ওপেন-বুক পরীক্ষা

শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও যুগোপযোগী করে তুলতে এবং শিক্ষার্থীদের মুখস্থ বিদ্যার বোঝা কমানোর লক্ষ্যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (CBSE)। ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ‘ওপেন-বুক অ্যাসেসমেন্ট’ বা খোলা বই পরীক্ষা। সম্প্রতি পাইলট স্টাডিতে প্রাপ্ত ইতিবাচক ফল এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ব্যাপক সমর্থনের পর বোর্ডের গভর্নিং বডি এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) ২০২০ এবং ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক ফর স্কুল এডুকেশন (NCFSE) ২০২৩-এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভরতা থেকে সরিয়ে এনে প্রয়োগমুখী ও বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটানো।

খোলা বই পরীক্ষার পদ্ধতি ও উদ্দেশ্য

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি টার্মে তিনটি লিখিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের মতো মূল বিষয়গুলিতে খোলা বই পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যপুস্তক, ক্লাস নোট বা অন্য রেফারেন্স বই ব্যবহার করে উত্তর লিখতে পারবে।

NCFSE-র মতে, এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য কেবল তথ্য যাচাই করা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের শেখা জ্ঞানকে সঠিকভাবে প্রয়োগ, বিশ্লেষণ এবং যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতাকে মূল্যায়ন করা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং বাস্তব জীবনে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পুরোনো অভিজ্ঞতা এবং নতুন রূপরেখা

এর আগে ২০১৪ সালে CBSE নবম ও একাদশ শ্রেণির কিছু বিষয়ের জন্য ‘ওপেন টেক্সট বেসড অ্যাসেসমেন্ট’ (OTBA) চালু করেছিল, যা ২০১৭-১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার বোর্ড আরও সুসংহত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া পাইলট প্রকল্পে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা রেফারেন্স বই ব্যবহারে এবং ধারণা প্রয়োগে এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। তবে শিক্ষকরা মনে করছেন, সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই পদ্ধতি কার্যকর করা সম্ভব।

নতুন ব্যবস্থায় প্রশ্নের মান বজায় রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা জাগিয়ে তুলতে বোর্ড এখন মানসম্মত নমুনা প্রশ্নপত্র তৈরি করবে। যদিও এই ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক নয়, আগ্রহী স্কুলগুলির জন্য CBSE একটি সহায়ক কাঠামো তৈরি করে দেবে। বোর্ডের আশা, এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার চাপ কমাবে এবং পড়াশোনাকে আরও আনন্দদায়ক ও বাস্তবমুখী করে তুলবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy