সনাতন ধর্ম এবং বিশেষত শাক্ত মতে, দেবী কালী হলেন আদ্যাশক্তি। সাধক রামকৃষ্ণের উক্তি অনুসারে, ‘কালীই ব্রহ্ম এবং ব্রহ্মই কালী’। স্থির, নিষ্ক্রিয় ব্রহ্ম যখন সক্রিয় হন, তখনই তিনি কালীর রূপ ধারণ করেন। শক্তি ছাড়া ব্রহ্মকে এবং ব্রহ্ম ছাড়া শক্তিকে ভাবা অসম্ভব। দেবীর এই শক্তির একাধিক রূপ রয়েছে, যার মধ্যে প্রধান ১১টি রূপের আলাদা মাহাত্ম্য প্রচলিত।
নিচে দেবী কালীর সেই ১১টি রূপের মহিমা তুলে ধরা হলো:
- দক্ষিণাকালী (শ্যামা মা): গোটা পশ্চিমবঙ্গে দেবীর এই রূপটি সবচেয়ে বেশি পূজিত হন। দেবীর গায়ের রং নীল, গলায় থাকে নরমুণ্ডমালা। তাঁর বাঁ হাতে থাকে নরমুণ্ড ও খাঁড়া এবং ডান হাতে আশীর্বাদের ভঙ্গিমা। এই কালীর পায়ের নীচে শিব শুয়ে থাকেন।
- মহাকালী: এই কালীর সাধনা সাধারণত তন্ত্র মতে করা হয়। মহাকালীর দশ মাথা, দশ হাত ও দশ পা থাকে এবং দশ হাতেই অস্ত্র থাকে। এই রূপের সঙ্গে শিবের অধিষ্ঠান দেখা যায় না। ভূত চতুর্দশীতে এই কালীর পুজো করা হয়।
- শ্মশানকালী: এই কালীর সাধনা মূলত শ্মশানে করা হয়। তিনি রণচণ্ডী রূপে পূজিতা হন। অতীতে ডাকাতরা এই কালীর পুজো সেরে ডাকাতি করতে যেত এবং এই পূজার সঙ্গে নরবলির অতীতও জড়িয়ে আছে বলে প্রচলিত।
- ফলহারিণী কালী: এই কালীর পুজো বছরে একবার করা হয় এবং এটি বেশিরভাগ গৃহস্থের বাড়িতেই পূজিত হন। কথিত আছে, এই দিনেই শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাদেবীকে ঈশ্বর জ্ঞানে পুজো করেছিলেন। সংসারে শান্তি ও সুস্থতা বজায় রাখতে এই রূপের পুজো করা হয় বলে বিশ্বাস।
- সিদ্ধকালী: মূলত সিদ্ধিলাভের উদ্দেশ্যে সাধকরা ঘোর অমাবস্যায় এই কালীর পুজো করে থাকেন।
- শ্রীকালী: ইনি দেবী দুর্গা বা পার্বতীরই এক বিশেষ রূপ। দারুক নামে অসুরকে বধ করেছিলেন এই দেবী। এমনকি মহাদেবের কণ্ঠে ঢুকে বিষ ধারণ করেছিলেন শ্রীকালী।
- কাম্যাকালী: এই কালীর পুজো সাধারণত অষ্টমী, চতুর্দশী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে হয়ে থাকে। এই পূজার রীতিনীতি অনেকটা দক্ষিণাকালীর মতোই, এবং এই কালীর পায়ের তলায়ও শিবের অধিষ্ঠান দেখা যায়।
- রক্ষাকালী: দক্ষিণাকালীর মতোই রক্ষাকালীও অত্যন্ত পূজিত হন। জগত্ সংসারকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন বলে এই দেবীর নাম রক্ষাকালী। বসতভূমিকে রক্ষার উদ্দেশ্যেও অনেক গৃহস্থ বাড়িতে এই কালীর পুজো করা হয়।
- চামুণ্ডা কালী: ইনি একইসঙ্গে ভগবতী দুর্গা এবং পার্বতীর রূপ। চণ্ড ও মুণ্ড নামক দুই অসুরকে বধ করেছিলেন বলে এই দেবীর নাম চামুণ্ডা। অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য কালীর এই রূপের পূজা করা হয়।
- গুহ্যকালী: এই দেবীর গায়ের রং মিশমিশে কালো এবং তাঁর গলায় ৫০টি নরমুণ্ডসহ মালা থাকে। এই দেবীর রূপ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।
- ভদ্রকালী: জনসমাজের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য এই কালীর পুজো করা হয়। মূলত মন্দিরে এই দেবীর পুজো করার প্রথা প্রচলিত আছে।