কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমারের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। গত ১৯ নভেম্বর ডিকে শিবকুমার (DK Shivakumar) দলের কর্মীদের সামনে বলেছিলেন, “আমি তো আর সারাজীবনের জন্য এই পোস্ট (কর্ণাটক কংগ্রেস সভাপতি) ধরে রাখতে পারি না।” এর মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁর দাবির সময় আসন্ন।
হুঁশিয়ারি, আলোচনা, ও পাল্টা মন্তব্যের পর পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হলেও, শিবকুমারের সাম্প্রতিক মন্তব্য ফের তাঁর সনিয়া আনুগত্যের কথা প্রতিষ্ঠা করল।
সোনিয়া গান্ধির প্রতি আনুগত্য
বেঙ্গালুরুতে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় ডিকে শিবকুমার সনিয়া গান্ধির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন:
“সনিয়া গান্ধি ২০ বছর কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করেছেন। আবদুল কালাম (তৎকালীন রাষ্ট্রপতি) তাঁকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছিলেন মনমোহন সিং-ই দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারেন।”
সনিয়া গান্ধির প্রশংসা করার পাশাপাশি, শিবকুমার কর্ণাটকের ভোটারদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন অব্যাহত রাখার আবেদন জানান এবং ২০২৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁর দলকে সমর্থন করার আর্জি জানান।
আড়াই বছরের প্রতিজ্ঞা এবং টানাপড়েন
২০২৩ সালের কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে তুমুল টানাপড়েন শুরু হয়। শিবকুমার, যিনি জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি জানান। দলীয় সূত্রের খবর, যখন কোনও সমাধান হচ্ছিল না, তখন সনিয়া গান্ধির একটি ফোন কলই পরিস্থিতি সামাল দেয়।
-
ঐকমত্য: সনিয়ার কথাতেই শিবকুমার পাঁচ বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়সীমা আড়াই-আড়াই বছর করে ভাগাভাগি করে নিতে রাজি হয়েছিলেন এবং চোখের জলে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি ছেড়ে দেন।
-
বর্তমান দ্বন্দ্ব: কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সিদ্দারামাইয়া ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে নীরব থাকায় ফের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ও পাল্টা জবাব
সম্প্রতি শিবকুমার ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন, “কথার জোরই পৃথিবীর জোর। আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করা পৃথিবীর অন্যতম সেরা ক্ষমতার মধ্যে একটা।” এর সরাসরি উত্তর না দিলেও সিদ্দারামাইকে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে লিখতে দেখা যায়: “কোনও প্রতিজ্ঞা যতক্ষণ না মানুষের ভাল করছে, ততক্ষণ তাতে কোনও জোরই নেই।”
এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে জানিয়েছেন, তিনি সনিয়া ও রাহুল গান্ধির সঙ্গে কথা বলে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের আগেই এই দ্বন্দ্বের সমাধান খুঁজবেন। আপাতত দুপক্ষই প্রকাশ্যে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয় না আনার বিষয়ে রাজি হয়েছেন।