এই প্রথমবার দুর্গাপূজার উৎসবের আবহেও যেন এক গভীর শূন্যতা গ্রাস করেছে নদিয়ার রানাঘাটবাসীকে। প্রতি বছর যিনি রানাঘাটের পূজার আনন্দ ভাগ করে নিতেন, সেই শিক্ষক এবং পর্বতারোহী সুব্রত ঘোষ এবারের উৎসবে অনুপস্থিত। পাহাড়কে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে যিনি সংসার পর্যন্ত করেননি, সেই সুব্রত ঘোষ আজও নিখোঁজ রয়েছেন এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে।
পেশায় শিক্ষক হলেও পাহাড়ের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল শৈশব থেকেই। জীবনের শেষ ইচ্ছে ছিল পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করা। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে বেরিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু অভিযানের পর আর মাতৃভূমিতে ফেরা হয়নি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে স্থানীয় স্তর পর্যন্ত তাঁর নিখোঁজ হওয়ার খবর আলোড়ন তুলেছিল। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সহ গোটা শহর শোকাহত হয়েছিল রানাঘাটের এই ‘গর্ব’-এর এমন করুণ পরিণতিতে।
চারের পল্লীর মণ্ডপে ‘স্বপ্নদ্রষ্টা’ সুব্রত!
এই বিষাদের আবহেই রানাঘাট পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একমাত্র চারেরপল্লী দুর্গোৎসব কমিটি এ বছর এক ভিন্ন আবেগে মেতে উঠেছে। তাঁদের পূজোর মণ্ডপজুড়ে শোভা পাচ্ছে সুব্রত ঘোষের ছবি, এভাবেই তাঁকে জানানো হচ্ছে বিশেষ শ্রদ্ধা।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “সুব্রতবাবু ছিলেন রানাঘাটের অহংকার। তিনি শুধু শিক্ষক নন, একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। পাহাড় জয়ের জন্য তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
উল্লেখ্য, সুব্রত ঘোষ ও রানাঘাটের আর এক মেয়ে রুম্পা একই সঙ্গে এভারেস্ট অভিযানে গিয়েছিলেন। রুম্পা নিরাপদে ফিরে আসতে পারলেও, আর ফেরেননি সুব্রতবাবু। সেদিন রানাঘাট তাঁদের দু’জনকেই একসঙ্গে সংবর্ধনা জানিয়েছিল। আজ সেই স্মৃতিই ফিরে এসেছে গভীর বেদনার সঙ্গে।
পূজার আনন্দের মধ্যেও তাই এবার এই শহরে মিশে রয়েছে বিষণ্ণতার রং। সুব্রত ঘোষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে রানাঘাটের মানুষ এক সুরে বলছেন— তিনি হারিয়ে গেলেও তাঁর স্বপ্ন, তাঁর সাহসিকতা ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে।