আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শান্তিনিকেতনের পাশে অন্ধকার, সাহেবডাঙা গ্রামে নেই পাকা রাস্তা, পানীয় জল, চরম সংকটে আদিবাসী পরিবার

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ তকমা পাওয়া শান্তিনিকেতনের (বোলপুর শহর) থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত আদিবাসী অধ্যুষিত সাহেবডাঙা গ্রাম। এই গ্রামে এখনও লাগেনি উন্নয়নের ছিঁটেফোঁটাও। ভগ্নপ্রায় মাটির বাড়ি, কাঁচা রাস্তাঘাট, পানীয় জলের চরম সংকট এবং আবাসন প্রকল্পের টাকায় কাটমানির অভিযোগ—সব মিলিয়ে কার্যত জীবজন্তুর মতো জীবনযাপন করছেন প্রায় ১৮০ জন বাসিন্দা।

সাহেবডাঙা গ্রামের করুণ চিত্র: শান্তিনিকেতনের কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সাহেবডাঙা গ্রামে কমপক্ষে ৫০টি পরিবারে শিশু-সহ প্রায় ১৮০ জনের বাস।

  • রাস্তা ও আবাসন: গ্রামের প্রবেশ পথ খাল বরাবর একটি সরু কাঁচা রাস্তা। গ্রামের ভেতরেও কাঁচা রাস্তা। মাটির বাড়িগুলো ভেঙে পড়ছে, কোনো রকমে বস্তা ও শাড়ি দিয়ে ভাঙা দেওয়াল ঢেকে রাখা হয়েছে।

  • আবাস যোজনার দুর্নীতি: গোটা গ্রামে কোনও আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি হয়নি। মাত্র দু’টি পরিবার প্রকল্পের টাকা পেলেও, তাদের অভিযোগ— শাসকদলের নেতারা তার থেকে কাটমানি নিয়েছেন। ফলে টাকার অভাবে সেই বাড়ি অর্ধেক হয়েই পড়ে রয়েছে।

  • পানীয় জলের সংকট: গ্রামে মাত্র দু’টি নলকূপ, যার মধ্যে একটি অকেজো। একটিমাত্র নলকূপের অপরিশোধিত জলই পানীয় জলের একমাত্র ভরসা। স্নান ও অন্যান্য কাজের জন্য অপরিশোধিত জলে ভরা একটি পুকুর ব্যবহার করতে হয়। গ্রামে শৌচাগারও নেই।

ভোট এলেই বাড়ে কদর: গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, উন্নয়ন তো দূর, বেঁচে থাকার ন্যূনতম উপাদানটুকুও গ্রামে নেই। শুধুমাত্র ভোট এলেই নেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। তখন টোটো করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় রাস্তা, ঘর তৈরি করে দেওয়ার। ভোট পার হলেই আর কেউ ফিরেও তাকায় না।

গ্রামবাসীদের মধ্যে বাবরি বাস্কি, যুগন মুর্মু প্রমুখরা জানান: “সরকারি কোনও সাহায্যই মেলে না। বাড়ি পাইনি। দু’জন পেয়েছিল, তাও নেতারা টাকা কেটে নিয়েছে। গ্রামের রাস্তাগুলো এমন যে প্রসূতিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি আসতেই পারে না।”

প্রশাসন ও মন্ত্রীর আশ্বাস: এদিকে, রাস্তাঘাট ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ৩২ কোটি টাকা এবং পথশ্রীর জন্য টাকা বীরভূম জেলায় বরাদ্দ হলেও এই গ্রামে তার ছিঁটেফোঁটাও পৌঁছায়নি।

  • মহকুমাশাসকের আশ্বাস: বোলপুরের মহকুমাশাসক অনিমেষ কান্তি মান্না জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন এবং গ্রামের উন্নয়নের জন্য আলোচনা করবেন।

  • কারা মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া: রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ অবশ্য এর জন্য বাম আমলকে দায়ী করে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধরে ধরে গ্রামবাংলার উন্নয়ন করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার বহু ক্ষেত্রে টাকা বন্ধ করে দিলেও আমাদের সরকার উন্নয়নের কাজে থেমে থাকেনি। কোথাও কোনও খামতি থাকলে তা পূরণ করা হবে।”

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy