শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আবর্জনা মুক্ত রাখতে অভিনব উদ্যোগ নিল হুগলির ভদ্রেশ্বর পুরসভা (Bhadreswar Municipality)। বর্জ্য প্লাস্টিকের বিনিময়ে এবার মা-ক্যান্টিনের মাধ্যমে বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো শহরকে প্লাস্টিকমুক্ত করা এবং একইসঙ্গে দরিদ্র ও গৃহহীনদের খাদ্যের সংস্থান করা।
ভদ্রেশ্বরের জুটমিল কলোনি-সহ বিভিন্ন বস্তি এলাকায় বহু মানুষ যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলে দেন। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে পুরসভা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যানার দিয়ে প্রচার শুরু করেছে।
বদলে কী মিলছে?
-
৫০০ গ্রাম বর্জ্য প্লাস্টিক: একটি খাবারের কুপন
-
১ কেজি বর্জ্য প্লাস্টিক: দু’টি খাবারের কুপন
-
২ কেজি বর্জ্য প্লাস্টিক: পাঁচটি খাবারের টোকেন
ভদ্রেশ্বর পালবাগানে পুরসভা লজে মা-ক্যান্টিন থেকে এই বর্জ্য পদার্থের বিনিময়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে। এই মা-ক্যান্টিনে এমনিতেই প্রায় ৩০০ জনকে খাবার দেওয়া হয়।
পুরসভার চেয়ারম্যানের বক্তব্য:
ভদ্রেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রলয় চক্রবর্তী জানান, “গত ৩ বছর ধরে এখানে মা-ক্যান্টিন চলে আসছে। গৃহহীন ও ক্যানসার রোগীদের বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয়। মা ক্যান্টিনে ৫ টাকার বিনিময়ে ডিম-ভাত ও সয়াবিনের তরকারি দেওয়া হয়। যাঁরা সেই টাকাও দিতে পারছেন না, তাঁদের জন্যই পুরসভার তরফে এই উদ্যোগ চালু করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেকের বাড়ি ও তার আশেপাশের নর্দমায় অনেক প্লাস্টিক পড়ে থাকে। সেই পড়ে থাকা প্লাস্টিক ও বর্জ্য দিলেই একটি করে খাবারের কুপন দেওয়া হচ্ছে। শহর ও সমাজের জন্য কিছুটা শ্রম দিলে বিনামূল্যে এই খাবার পেতে পারে। নিজের বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখার জন্য এই চিন্তাভাবনা। সমাজ পরিষ্কার রাখা সকলেরই কর্তব্য, সেই জায়গা থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”
শহরবাসীর প্রতিক্রিয়া:
স্থানীয় বাসিন্দারা পুরসভার এই উদ্যোগে দারুণ খুশি।
-
স্থানীয় বাসিন্দা বিমল রায় বলেন, “পরিবেশ দূষণ মুক্ত করার জন্য খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছে ভদ্রেশ্বর পুরসভা। আমি ২ কিলো প্লাস্টিক নিয়ে এসেছি, ৫টি কুপন পেয়েছি। বিনামূল্যে খাবার পেলে সকলেরই সহযোগিতা করা উচিত।”
-
মা-ক্যান্টিনে প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাবার আনতে আসা গোপাল কর্মকার বলেন, “এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা যারা মা-ক্যান্টিনের উপর নির্ভর করে থাকি, তারা একটু চেষ্টা করলে ১ বা ২ কেজি প্লাস্টিক জোগাড় করতেই পারি। ড্রেনে প্লাস্টিক না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় জমা করলেই শহরও পরিষ্কার থাকবে। ২-৩ দিন অন্তর প্লাস্টিক নিয়ে এলে বিনা পয়সায় খাবার পাব। এটা সমাজের স্বার্থে খুবই ভালো কাজ।”
মা-ক্যান্টিন প্রকল্পের পটভূমি:
উল্লেখ্য, মা-ক্যান্টিন রাজ্যের একটি জনপ্রিয় প্রকল্প, যা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন। নামমাত্র খরচে সাধারণ মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করাই ছিল মূল লক্ষ্য।
চলতি বছরের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন যে এখনও পর্যন্ত (২০২৫ সালের মার্চ মাস) প্রায় ৭ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষ মা-ক্যান্টিন থেকে খাবার খেয়েছেন এবং প্রতি মাসে প্রায় ২১ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই ক্যান্টিনের খাবার খান।