বয়স কারও জন্য থেমে থাকে না। সময়ের স্রোতে জীবন এগিয়ে চলে, আর সেই সঙ্গে বাড়ে নানান দায়িত্ব। এক সময়ে যা ইচ্ছে ছিল, বয়স বাড়লে অনেক ক্ষেত্রেই তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যখন জীবন ৩০-এর গণ্ডি পেরোয়, তখন কিছু ভুল এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ৩০ বছর বয়সে কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলা উচিত –
চাকরি পরিবর্তনে দ্বিধা:
অনেকের মনে এই চিন্তা বাসা বাঁধে যে, বর্তমান চাকরি ভালো বেতন দিচ্ছে, তাই এটি ছাড়া যাবে না। কিন্তু যে চাকরিতে মানসিক শান্তি নেই এবং যা ভালো লাগে না, তা ধরে রাখার কোনো অর্থ নেই। যদি আপনার যোগ্যতা থাকে, তবে ভালো সুযোগ অবশ্যই আসবে। তাই নতুন চাকরির সন্ধানে দ্বিধা না করে আত্মবিশ্বাস রাখুন।
ঋণের বোঝা:
কেরিয়ারের শুরুতেই জীবনের নানা ঋণ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। নতুন করে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ঋণ ভবিষ্যতের জন্য বোঝা হতে পারে।
মাসিক বিলের অবহেলা:
প্রতি মাসের বিদ্যুৎ, জল বা অন্যান্য বিল সময় মতো পরিশোধ না করলে সেবাদানকারী সংস্থা কিন্তু ভুলবে না। তাই সব বিলের জন্য একটি নির্দিষ্ট বাজেট তৈরি করুন এবং সময় মতো তা পরিশোধ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
অপরিকল্পিত বাড়ি কেনা:
বেতন বাড়লে অনেকেই একটি স্থায়ী ঠিকানার ব্যবস্থা করতে চান। তবে আর্থিকভাবে পুরোপুরি সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত এমন বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়। তাড়াহুড়ো করে বাড়ি কিনলে আর্থিক চাপ বাড়তে পারে।
সঞ্চয়ে অনীহা:
অনেকেরই ধারণা থাকে যে, আপাতত সঞ্চয় না করলেও পরে তা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু এই ধারণা ভুল। জীবনের শুরু থেকেই অল্প অল্প করে হলেও সঞ্চয় করার অভ্যাস তৈরি করা উচিত। এটি ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার জন্য জরুরি।
বিনিয়োগে ভয়:
চাকরির পাশাপাশি যেকোনো লাভজনক বিনিয়োগে যুক্ত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু ‘এখনও সময় হয়নি’ ভেবে এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ আপনার আর্থিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে পারে।
অন্যের সঙ্গে তুলনা:
সমবয়সীরা বেশি বেতন পাচ্ছেন ভেবে নিজেকে ব্যর্থ মনে করাটা ভুল। হয়তো আপনি কর্মজীবনে দেরিতে প্রবেশ করেছেন। অন্য কেউ আপনার চেয়ে বেশি বেতন পাচ্ছে মানে এই নয় যে আপনি অযোগ্য। নিজের যোগ্যতা এবং উন্নতির দিকে মনোযোগ দিন।
খাবারে লাগামছাড়া:
স্বাস্থ্য ভালো আছে ভেবে অনেকেই ছোটবেলার মতো যা খুশি তাই খেতে শুরু করেন। কিন্তু মনে রাখবেন, বয়সের সঙ্গে খাবারের বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার ত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
পোশাকে অগোছালোপনা:
ত্রিশ পেরোনোর পরেও এলোমেলো পোশাক পরাকে স্বাভাবিক ভাবা উচিত নয়। বয়সের সঙ্গে রুচিশীল পোশাক পরিধান করা ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।
অপরিকল্পিত সন্তান:
সন্তান চান, তাই এখনই নিতে হবে – এমন ভাবনা সঠিক নয়। পরিবারে নতুন অতিথির সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য শুধু আপনার ইচ্ছাই যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে আপনার আর্থিক ও মানসিক সামর্থ্যের সমন্বয়ও জরুরি।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস:
আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো, তবে নিজেকে অপ্রতিরোধ্য ভাবা উচিত নয়, বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিষয়ে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া জরুরি।
কম দামের প্রতি মোহ:
কম দামের পণ্য কিনে অনেক অর্থ বাঁচানো যায় না। এটি সঞ্চয়ের সঠিক উপায় নয়। বরং এতে নিম্নমানের পণ্যে আপনার ঘর ভরে যেতে পারে। গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা দেয়।
স্বেচ্ছাচারিতা:
সবকিছু নিজের মর্জি মতো চলবে, তাই যা মন চায় তাই করবেন – এমন ধারণা নিয়ে চললে ভুল করবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। অর্থ খরচের ক্ষেত্রে সংযমী হোন এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করুন।
এই ভুলগুলো এড়িয়ে চললে ৩০ বছর বয়সেও একটি সুন্দর ও স্থিতিশীল জীবন যাপন করা সম্ভব। মনে রাখবেন, সচেতনতাই সাফল্যের চাবিকাঠি।