‘সারা দিন ক্লান্ত লাগছে? শুধু ঘুম কম নয়, এই ৮টি গোপন কারণই হতে পারে আপনার ক্লান্তি-রাজ!’

পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও গভীর ঘুম শরীর ও মনকে সতেজ রাখার মূল মন্ত্র। দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টার নিরবচ্ছিন্ন ঘুম মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে অপরিহার্য। কিন্তু অনেকেই হয়তো সময়মতো ঘুমান না, যার ফলে সারাদিন এক অব্যক্ত ক্লান্তি যেন পিছু ছাড়ে না। তবে শুধু কম ঘুমই নয়, আপনার অজান্তেই আরও ৮টি অভ্যাস বা শারীরিক সমস্যা আপনাকে নিরন্তর ক্লান্ত করে তুলতে পারে। চলুন, জেনে নিই সেই ‘ক্লান্তি-রাজের’ গোপন কারণগুলি।

১. জলের অভাব: নীরব জলশূন্যতা ও ধীর রক্তপ্রবাহ জল আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, শরীরে সামান্য ডিহাইড্রেশনও গুরুতর ক্লান্তির কারণ হতে পারে। যখন শরীর জলশূন্য হয়ে পড়ে, তখন রক্তের প্রবাহ কমে যায়। এর ফলে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান কোষ ও পেশিগুলোতে পৌঁছানোর গতি কমে যায়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে আপনার সতেজতার উপর।

২. আয়রনের ঘাটতি: অলসতা ও বিরক্তির উৎস আয়রনের ঘাটতি কেবল আপনাকে ক্লান্তই করে না, বিরক্ত ও খিটখিটেও করে তোলে। শরীরে আয়রনের অভাব হলে পেশি ও কোষগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। কম আয়রন গ্রহণের ফলে রক্তাল্পতাও হতে পারে, যা ক্লান্তির অন্যতম প্রধান কারণ। এই ঘাটতি পূরণে কিডনি বিন, ডিম, সবুজ শাকসবজি, বাদাম ও টফু নিয়মিত পাতে রাখুন।

৩. সকালের খাবার এড়িয়ে যাওয়া: মেটাবলিজমের ধীরগতি ব্যস্ততার অজুহাতে অনেকেই সকালের খাবার এড়িয়ে যান। অথচ সকালের খাবারই শরীরকে দিনের প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়। পুষ্টিকর সকালের খাবার মেটাবলিজম রেট বাড়াতেও সাহায্য করে। যারা সকালের খাবার বাদ দেন, তারাই দিনের বেশিরভাগ সময় ক্লান্তবোধ করেন। সকালের খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা জরুরি।

৪. ক্লান্তি ভেবে শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকা: সুখী হরমোনের অভাব অনেকেই ক্লান্তির অজুহাতে শরীরচর্চা এড়িয়ে চলেন। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, শরীরচর্চাই সুখী হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা আপনাকে আরও উদ্যমী করবে ও দিনের ক্লান্তি দূর করবে। নিয়মিত অনুশীলন শরীরের শক্তিস্তর বাড়িয়ে দেয় এবং আপনাকে দীর্ঘক্ষণ সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে।

৫. কঠোর পরিশ্রম ও মানসিক চাপ: নীরব ঘাতকের প্রভাব অতিরিক্ত কাজ, উদ্বেগ এবং কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করাও কিন্তু আপনাকে নিরন্তর ক্লান্ত করে তুলতে পারে। জীবনের অন্যান্য দিকগুলোকে উপেক্ষা করে কখনো হাসিখুশি থাকা যায় না। মানসিক চাপ ক্লান্তির মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। মনে রাখবেন, মানসিক চাপ সবচেয়ে বড় নীরব ঘাতক, যা নীরবে আপনার জীবনীশক্তি কেড়ে নেয়।

৬. ঘুমানোর আগে মদ্যপান: ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত কেউ কেউ ঘুমানোর আগে মদ্যপান করেন, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস অ্যাড্রেনালাইন সিস্টেমে আকস্মিক ঢেউ তৈরি করে, যা ঘুমের স্বাভাবিক চক্রে হস্তক্ষেপ করে। ফলে গভীর ঘুম কখনোই হয় না, রাতে বারবার ঘুম ভাঙতে পারে। এটিই পরের দিন আপনার ক্লান্তি বাড়ানোর জন্য দায়ী।

৭. স্মার্টফোন বা চ্যাটিংয়ে আসক্তি: স্ক্রিন টাইমের মারণফাঁদ অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে স্মার্টফোন বা অন্য গ্যাজেট ব্যবহার, শরীরের স্বাভাবিক সিস্টেমকে ব্যাহত করে এবং ঘুমে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে আপনি পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান না এবং সারাদিন ক্লান্তবোধ করেন। নীল আলো চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে মেলাটোনিন নিঃসরণে বাধা দেয়, যা ঘুমের জন্য অপরিহার্য।

৮. অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ: জেগে থাকার ভ্রান্ত ধারণা অনেক কফিপ্রেমী আছেন, যারা সকাল থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত বেশ কয়েক কাপ এই বিশেষ পানীয় পান করেন। ক্লান্তিবোধ করলেই বেশিরভাগ মানুষ কফির মগে চুমুক দেন। কফি আপনাকে সাময়িকভাবে জাগ্রত রাখলেও, সিস্টেমে অতিরিক্ত ক্যাফেইন আপনার ঘুমের পাশাপাশি জেগে ওঠার সময়কেও মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলস্বরূপ দিনের বেলায় ক্লান্তি আপনাকে গ্রাস করে।

তাই, শুধু ঘুম কমের দোহাই না দিয়ে, আপনার দৈনন্দিন জীবনের এই অভ্যাসগুলির দিকে নজর দিন। সামান্য পরিবর্তনই আপনাকে ক্লান্তি থেকে মুক্তি দিয়ে এক সতেজ ও প্রাণবন্ত জীবন উপহার দিতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy