মানিব্যাগ পুরুষদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। টাকা, কার্ড, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র – সবকিছুর ঠাঁই হয় এই ছোট্ট ব্যাগে। কিন্তু প্যান্টের পেছনের পকেটে মানিব্যাগ রাখার যে সাধারণ অভ্যাস, তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা মারাত্মক হতে পারে, সে বিষয়ে কি আপনি অবগত? বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই আপাত নিরীহ অভ্যাস ডেকে আনতে পারে দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক সমস্যা, যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ!
অদৃশ্য বিপদ, গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি:
১. ব্যথা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘস্থায়ী কোমর:
পেছনের পকেটে মোটা মানিব্যাগ রাখা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাসের কারণে একজন পুরুষ টানা তিন মাস পর্যন্ত কোমর ব্যথা এবং পায়ের যন্ত্রণায় ভুগতে পারেন। যখন আপনি বসেন, মানিব্যাগটি আপনার নিতম্বের একপাশে চাপ সৃষ্টি করে, যা মেরুদণ্ডকে একদিকে বাঁকিয়ে দেয়। এর ফলে ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে এবং মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে।
২. স্নায়ুর দুর্বলতা এবং ক্ষতি:
প্যান্টের পেছনের পকেটে মোটা মানিব্যাগ রাখলে পুরুষদের স্নায়ু কম বয়সেই দুর্বল হতে শুরু করে। বিশেষ করে পিঠের নিচের অংশ এবং স্লিপ ডিস্কে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। যেহেতু বেশিরভাগ পুরুষ তাঁদের মানিব্যাগ ডান পকেটে রাখেন, তাই ডান সায়্যাটিক শিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা পা পর্যন্ত তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে দিতে পারে।
৩. ‘ফ্যাট ওয়ালেট সিন্ড্রোম’ (Fat Wallet Syndrome):
এই সমস্যার একটি সুনির্দিষ্ট নামও আছে—’ফ্যাট ওয়ালেট সিন্ড্রোম’ বা ‘পিরিফর্মিস সিন্ড্রোম’। অফিসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার সময়ও অনেক পুরুষ অসাবধানতাবশত পেছনের পকেটে মোটা মানিব্যাগ রেখে দেন। এই অভ্যাস সরাসরি ‘পিরিফর্মিস মাসল’ বা পিরিফর্মিস পেশীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এই পিরিফর্মিস পেশীর মধ্য দিয়েই সায়াটিক স্নায়ু চলে যায়। যখন মানিব্যাগের চাপে সায়াটিক ভেইনটিও সংকুচিত হয়, তখন পুরুষদের মধ্যে তীব্র সায়াটিক ব্যথা, অসাড়তা এবং পায়ের দুর্বলতার মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সমাধান আপনার হাতে:
এই গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে পুরুষদের উচিত এখনই সতর্ক হওয়া এবং মানিব্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা।
বসার সময় সতর্কতা: অফিসে, গাড়িতে বা যেকোনো স্থানে বসার সময় অবশ্যই পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে রাখুন। এটি পিঠের এবং কোমর ব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং: পিরিফর্মিস পেশীগুলো ভালো রাখতে নিয়মিত স্ট্রেচিং ব্যায়াম করুন। এর ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যথা থেকে মুক্তি মিলতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা এড়ানো যাবে।
একটি ছোট অভ্যাস পরিবর্তন করেই আপনি আপনার মেরুদণ্ড এবং স্নায়ুর স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারেন। জীবনযাত্রায় এই সামান্য পরিবর্তন আপনার দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা নিশ্চিত করবে।