শীতকাল মানেই পিঠা-পুলি, গরম কফি আর আরামদায়ক কম্বলের উষ্ণতা। কিন্তু এই মনোরম ঋতু অনেকের জন্যই নিয়ে আসে এক অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি – জয়েন্টের ব্যথা। ঠান্ডা বাড়লেই জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া এবং অস্বস্তি অনুভব করা একটি পরিচিত সমস্যা। তবে চিন্তার কিছু নেই! কিছু সহজ সমাধান মেনে চললে এই শীতেও আপনি জয়েন্টের ব্যথাকে বশে রাখতে পারবেন।
ঠান্ডায় জয়েন্টে ব্যথার নেপথ্যে কী?
শীতকালে জয়েন্টে ব্যথার প্রধান কারণ হলো তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা কমে যাওয়া। এর ফলে শরীরের টিস্যু এবং পেশীগুলো সংকুচিত ও শক্ত হয়ে যায়, যা অস্বস্তির জন্ম দেয়। ঠান্ডা পরিবেশ আমাদের শরীরের রক্তচাপকেও প্রভাবিত করে, যার ফলে জয়েন্ট-সকেটে নড়াচড়া কঠিন মনে হতে পারে।
এছাড়াও, শীতকালে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ (barometric pressure) কম থাকে। এর ফলে জয়েন্টের চারপাশের টিস্যুগুলো প্রসারিত হতে পারে, যা জয়েন্টগুলোর উপর চাপ বাড়ায় এবং ব্যথা আরও তীব্র করে তোলে। বিশেষ করে যাদের আর্থ্রাইটিস বা অতীতে আঘাতের ইতিহাস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
জয়েন্টের ব্যথা এড়াতে ৫টি কার্যকরী টিপস:
আপনার জীবনকে একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিতে এবং শীতেও সুস্থ থাকতে এই ৫টি টিপস আপনার দৈনন্দিন রুটিনে যোগ করুন:
১. নড়াচড়া শুরু করুন, জড়তা কাটান:
শীতকালে অলসতা জেঁকে বসলেও, নড়াচড়া করা অত্যন্ত জরুরি। যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং বা দ্রুত হাঁটার মতো হালকা কাজও আপনার জয়েন্টগুলোকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করবে। যদি ডেস্কে বসে কাজ করেন, তবে প্রতি ঘণ্টায় উঠে দাঁড়িয়ে সামান্য স্ট্রেচ করার জন্য একটি টাইমার সেট করুন। শরীরকে সচল রাখুন।
২. সহায়ক খাবার, প্রদাহকে করুন বশ:
আপনি যা খাচ্ছেন, তার প্রভাব সরাসরি আপনার জয়েন্টগুলোর উপর পড়ে। তাই খাদ্যতালিকায় ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার যেমন – মাছ (স্যালমন, সার্ডিন), আখরোট এবং তিসির বীজ যোগ করুন। এগুলো প্রদাহ কমাতে দারুণ কার্যকর। হলুদ এবং আদার মতো মশলা শুধু স্বাদের জন্যই নয় – এগুলো প্রাকৃতিক প্রদাহ-বিরোধী উপাদান, যা আপনার জয়েন্টের ব্যথা প্রশমিত করতে পারে। শীতের দুপুরে গরম স্যুপ এবং স্টু খেতে ভুলবেন না, কারণ এগুলো পুষ্টিতে ভরপুর এবং জয়েন্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৩. উষ্ণ থাকুন, শীতকে হারান:
ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে শরীরকে উষ্ণ রাখা জরুরি। গরম পোশাক, গ্লাভস এবং মোজা পরার অভ্যাস জয়েন্টগুলোকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। পেশীর জড়তা কমাতে এবং শরীরকে শিথিল করতে উষ্ণ স্নান দারুণ কার্যকর। এছাড়া, হিটিং প্যাড ব্যবহার করেও নির্দিষ্ট জয়েন্টের ব্যথা উপশম করা যায়।
৪. পর্যাপ্ত জল পান করুন, হাইড্রেটেড থাকুন:
শীতকালে অনেকেই জল কম পান করেন, যা ভুল। হাইড্রেটেড থাকলে তা জয়েন্টগুলোতে তৈলাক্ততা বজায় রাখতে সাহায্য করে, ফলে নড়াচড়া সহজ হয়। পর্যাপ্ত জল পান করার পাশাপাশি ভেষজ স্যুপ, অথবা উষ্ণ জলে ২ মিলি আদার রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি আপনাকে হাইড্রেটেড এবং আরামদায়ক রাখবে।
৫. প্রাকৃতিক প্রতিকারে আস্থা রাখুন:
উষ্ণ তিল বা সরিষার তেল দিয়ে জয়েন্টগুলোতে হালকা ম্যাসাজ করলে রক্ত প্রবাহ উন্নত হয় এবং জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া ও ব্যথা কমাতে অসাধারণ কাজ করতে পারে। অশ্বগন্ধার মতো কিছু ভেষজ জয়েন্ট-সহায়ক বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত, যা বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই টিপসগুলো মেনে চললে শীতের আনন্দ উপভোগের পাশাপাশি আপনি জয়েন্টের ব্যথা থেকেও অনেকটাই স্বস্তি পেতে পারবেন। সুস্থ থাকুন, সচল থাকুন!