বর্তমান ব্যস্ত যুগে কেবল মা-বাবাই নন, বাড়ির ছোট্ট সদস্যরাও স্কুল, কোচিং আর পড়াশোনা নিয়ে চরম ব্যস্ত। পড়াশোনার পাশাপাশি নানা গুণে পারদর্শী হতে গিয়ে তাদের হাতেও সময় বড় কম। দিনের একটি বড় অংশ কাটে স্কুল বা কোচিংয়ে। আর এই ব্যস্ততার কারণে অনেক বাবা-মা শিশুদের টিফিনে বা বাড়িতে বাইরের খাবার দিয়ে থাকেন। এর ফলে নানারকম শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি শৈশব থেকেই স্থূলতার মতো গুরুতর সমস্যা শিশুদের তাড়া করছে।
শিশুদের স্থূলতা মোকাবিলায় চিকিৎসকরা তাদের খাদ্যতালিকা থেকে কিছু খাবার একেবারে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। টিফিনেই হোক বা বাড়িতে, আপনার সন্তানকে কোন কোন খাবার দেওয়া বন্ধ করতে হবে, জেনে নিন।
১. ইনস্ট্যান্ট নুডলস: চটজলদি আনন্দের পেছনে লুকিয়ে বিপদ ইনস্ট্যান্ট নুডলস বানাতে কম সময় লাগে এবং খেতেও সুস্বাদু, তাই অনেক বাবা-মা শিশুর বায়না মেটাতে এই ধরনের খাবার দিয়ে থাকেন। কিন্তু টিফিনে বাচ্চাদের এই ধরনের চটজলদি খাবার না দেওয়াই ভালো। নুডলসের প্রধান উপকরণ হলো ময়দা, যা বেশি খেলে স্থূলত্বের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, প্যাকেট নুডলসে আজিনোমোটোর মতো উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে।
২. ভাজাভুজি খাবার: লোভনীয় অথচ বিষাক্ত চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার, রোল— এই সব পেলে শিশুদের আর কী বা চাই! তবে এই খাবার থেকে শিশুকে যতটা দূরে রাখা যায়, ততই ভালো। বাইরের খাবার কিংবা প্যাকেটজাত ভাজাভুজি দীর্ঘ দিন ভালো রাখার জন্য তাতে বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো থাকে। এই রাসায়নিক উপাদানগুলো শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো নয় এবং ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ।
৩. প্রক্রিয়াজাত খাবার: ফ্রিজে মজুত ‘সুবিধা’, কিন্তু ক্ষতি বেশি সসেজ, নাগেটসের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার অনেকের ফ্রিজেই মজুত থাকে। বাচ্চাকে কী টিফিন দেবেন তা বুঝতে না পেরে অনেকে এগুলি ভেজে দিয়ে দেন। কিন্তু শিশুর পেট ভরাতে গিয়ে আদতে তাদের ক্ষতি করা হচ্ছে বেশি। প্রক্রিয়াজাত কোনো খাবারই শিশুর জন্য ভালো নয়, কারণ এগুলিতে উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম, ফ্যাট এবং প্রিজারভেটিভ থাকে। তার চেয়ে চিকেন, ডিম, নানা রকম টাটকা সবজি, ফলের মতো স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি করে দিন, যা তাদের শরীরকে সুস্থ রাখবে।
৪. মিষ্টি সিরিয়াল: ‘হাই ফ্রুক্টোজ’ এর ফাঁদ কর্নফ্লেক্সের মতো সিরিয়াল সুস্বাদু করে তুলতে এতে মেশানো হয় ‘হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ’ এবং এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স উচ্চ থাকে। এছাড়াও, প্যাকেটজাত কর্নফ্লেক্সে অতিরিক্ত চিনি থাকে, যা কেবল ক্ষতিকারকই নয়, মেদ বৃদ্ধিতেও বিশেষ কার্যকর। যদিও অনেকে এর সঙ্গে দুধ, শুকনো ফল বা মরসুমি নানা ফল মেশান, কিন্তু তাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আরও বাড়ে, যা সাময়িক শক্তি বাড়ালেও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৫. নরম পানীয়: জলের বিকল্প নয়, স্থূলতার কারণ বর্তমান সময়ে শিশুদের অন্যতম সমস্যা হলো তারা জল খেতে চায় না। বরং নানারকম নরম পানীয়তে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। সময় পেলেই শিশু চুমুক দিচ্ছে সে সব পানীয়ে। তবে এই অভ্যাস একেবারেই ঠিক নয় এবং শিশুর স্থূলত্ব বৃদ্ধির জন্য এই অভ্যাস প্রধানত দায়ী। এই সব পানীয় চিনিতে ভরপুর থাকে। তাই সবার আগে প্যাকেটজাত ফলের রস, নরম পানীয় এবং সোডাযুক্ত পানীয় শিশুদের দেওয়া বন্ধ করে তাদের জল ও টাটকা ফলের রস খাওয়ানো উচিত।
বাবা-মায়ের সামান্য সচেতনতা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস শিশুদের একটি সুস্থ ও রোগমুক্ত ভবিষ্যৎ দিতে পারে। ব্যস্ততার অজুহাতে শিশুদের অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং তাদের সুস্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হন।