অতিরিক্ত রাগের বশে অনেকেই এমন ভুল কাজ করে ফেলেন, যা পারিবারিক শান্তি নষ্ট করে এবং ব্যক্তিগত জীবনেও চরম দুর্দশা ডেকে আনে। এই কারণেই প্রচলিত প্রবাদটি বলে: “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন”। মানুষ যেমন ভালো লাগার কারণে খুশি হন, তেমনই খারাপ লাগার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ পায়। তবে, খারাপ লাগলেই যে রাগে ফেটে পড়তে হবে, তা কিন্তু নয়। বরং ঠান্ডা মাথায় যেকোনো সমস্যার সমাধান দ্রুত করা সম্ভব।
যদিও রাগ মানুষের একটি স্বাভাবিক অভিব্যক্তি, তবে অতিরিক্ত রেগে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়াটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত রেগে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে মাদকাসক্তি কিংবা মানসিক রোগই প্রধান।
কেন আপনি অতিরিক্ত রেগে যাচ্ছেন?
আপনিও যদি কথায় কথায় রেগে যান, তাহলে অবশ্যই আগে জানতে হবে এর পেছনের কারণ। যদি মানসিক রোগের কারণে এমনটি হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এর আগে জেনে নিন, অতিরিক্ত রাগের সম্ভাব্য কারণগুলো:
- মানসিক অবসাদ: এটি অতিরিক্ত রাগের অন্যতম প্রধান কারণ। মানসিক অবসাদের কারণে টানা হতাশা, দুঃখ আসতে পারে। এমন অবস্থায় দীর্ঘ দিন থাকলে কথায় কথায় রাগ এবং অভিমান, উভয়ই হতে পারে।
- বাইপোলার ডিসঅর্ডার: অতিরিক্ত রেগে যাওয়ার লক্ষণ বাইপোলার ডিসঅর্ডারেরও ইঙ্গিত দিতে পারে। এই অসুখ থাকলে খানিক পরপরই মনের ভাবে পরিবর্তন আসে। অতিরিক্ত আনন্দের মধ্যেও থাকে রাগের অনুভূতি।
- মাদকাসক্তি: মাদকাসক্ত ব্যক্তিরাও অনেক সময় অতিরিক্ত রাগী প্রকৃতির হয়ে থাকেন। মনোরোগ চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য শরীরে প্রবেশ করলে তা হিংস্র ভাব তৈরি করে এবং চিন্তাশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কীভাবে বুঝবেন রাগ না-কি মানসিক রোগ বাড়ছে?
কিছু লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার রাগ স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম করে মানসিক রোগের দিকে যাচ্ছে কিনা:
- কথায় কথায় বিরক্ত হওয়া।
- নেতিবাচক ও খারাপ চিন্তা ক্রমাগত মাথায় ঘুরপাক খাওয়া।
- হঠাৎ করেই চেঁচামেচি বা চিৎকার করা।
- উচ্চ রক্তচাপ, বুক ধড়ফড়ের মতো শারীরিক সমস্যা বেড়ে যাওয়া।
- সাধারণ কোনো ঘটনাতেও আকস্মিক চুপ হয়ে যাওয়া।
যদি এই লক্ষণগুলো আপনার মধ্যে দেখা যায়, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কীভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনবেন?
অতিরিক্ত রাগের কারণ বুঝতে না পেরে অনেকেই ভুল করে ফেলেন—যাকে যা বলার নয় তা বলে ফেলেন, সমাজ, পরিস্থিতি ও পরিবেশ সম্পর্কে তখন ভুলে যেতে হয়। এর ফলে সমস্যা আরও বেড়ে যায় এবং রাগের বশে অনেকে কঠিন সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেন। এ কারণে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনবেন এই তীব্র আবেগ?
- কথা বলার আগে ভাবুন: কোনো কিছু বলার আগে এক মুহূর্ত থামুন এবং ভেবে নিন আপনার কথাগুলি কী প্রভাব ফেলবে।
- সমস্যায় বিচলিত না হয়ে সমাধান খুঁজুন: রাগের বশে সমস্যাকে বড় না করে বরং শান্তভাবে তার সমাধানের উপায় খুঁজুন।
- শ্বাসের ব্যায়াম: অতিরিক্ত রাগ হলে গভীর শ্বাসের ব্যায়াম (deep breathing exercises) করুন। এটি দ্রুত মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে।
- একাকি সময় কাটান: পরিবারের কারও উপর রাগ-ক্ষোভ হলে তার সামনে না গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য একা সময় কাটান। এতে মাথা ঠান্ডা হবে।
- মন খুলে কথা বলুন: পরিবারের সবার সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন, আপনার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করুন।
- অবসর সময় কাটান: ব্যস্ততার ফাঁকেও নিজের জন্য অবসর সময় বের করুন। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- ইতিবাচক চিন্তা করুন: নেতিবাচকতা পরিহার করে ইতিবাচক চিন্তা করার অভ্যাস করুন।
- ফলাফল নিয়ে ভাবুন: রাগ করার আগে ভাবুন, এই রাগের ফলে পরবর্তীতে কী হতে পারে। এটি আপনাকে সংযত হতে সাহায্য করবে।
- নিয়মিত মেডিটেশন: নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করুন। এতে মনে প্রশান্তি আসে এবং মানসিক স্থিরতা বাড়ে।
এই কৌশলগুলো নিয়মিত অনুশীলন করলে আপনি ধীরে ধীরে আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং একটি শান্ত ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন। কোন উপায়টি আপনার জন্য বেশি কার্যকরী, তা কিছুদিন অনুশীলন করলেই বুঝতে পারবেন।