জীবনের গতি যত বাড়ছে, আমাদের শারীরিক ও মানসিক চাপও ততই বাড়ছে। এই দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যোগাসন এখন আর শুধু প্রাচীন অনুশীলন নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতির সঙ্গে আত্মস্থ হয়ে সুস্থ জীবন চাইলে, নিয়মিত যোগাসন চর্চার বিকল্প নেই। ঔষধের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সুস্থ ও দীর্ঘজীবন লাভ করতে চাইলে যোগাসনই হতে পারে আপনার সেরা বন্ধু।
যোগাসন চর্চার সহজ নিয়মাবলী:
যোগাসন মানেই কঠিন বা অসম্ভব দেহভঙ্গি নয়। যারা নতুন শুরু করছেন, তাদের জন্য শুরুতে শীর্ষাসন, সর্বাঙ্গাসন বা পদ্মাসনের মতো কঠিন আসন পরিহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। একজন প্রশিক্ষকের কাছে সঠিক পদ্ধতি শেখা অত্যন্ত জরুরি।
সময়: সকাল, সন্ধ্যা, গোসলের আগে বা রাতে যোগাসন চর্চা করা যায়। তবে ভরপেটে কখনোই নয়। হালকা কিছু খাবার খাওয়ার আধঘণ্টা পর আসন করা যেতে পারে। তবে প্রাণায়াম বা মুদ্রা খালি পেটে অভ্যাস করাই ভালো।
অনিদ্রা রোগ: যাদের অনিদ্রার সমস্যা আছে, তারা রাতে খাবার পর শোবার আগে কিছুক্ষণ বজ্রাসন অভ্যাস করলে ভালো ফল পেতে পারেন।
আসন সংখ্যা: একবারে সাত-আটটির বেশি আসন অভ্যাস করা উচিত নয়। বয়স ও প্রয়োজন অনুযায়ী দু-একটি প্রাণায়াম বা মুদ্রা অভ্যাস করলে অল্প সময়ে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়।
বিশ্রাম: প্রতিটি আসন বা মুদ্রা অভ্যাসের পর প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।
যোগাসনের অসামান্য উপকারিতা:
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য যোগাসনের উপকারিতা অপরিসীম। আসুন জেনে নিই এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:
১. মানসিক চাপ ও অ্যাংজাইটি নিয়ন্ত্রণ: যোগা চর্চার প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো মানসিক চাপমুক্ত থাকা। এটি স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং অ্যাংজাইটির মতো গুরুতর মানসিক সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনে। এক সুশৃঙ্খল ও স্বাস্থ্যকর জীবনাচার তৈরি করে এটি।
২. হৃদযন্ত্রের সুস্থতা: যোগাসন হৃদযন্ত্রকে আরও সুষ্ঠুভাবে রক্ত সঞ্চালনে সক্ষম করে তোলে, যা হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ: গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে মধ্যবয়সীদের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় হতে পারে যোগাসন। এটি মেটাবলিজম উন্নত করে এবং ফ্যাট বার্নিংয়ে সাহায্য করে।
৪. মন-মেজাজ ভালো রাখা: মন খারাপ থাকলে যোগাসন নিমেষেই তা ভালো করে দিতে পারে। এটি সুখকর অনুভূতি দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদি সুখ লাভে এক অতুলনীয় ব্যায়াম। দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে যোগায় বসলে মুহূর্তেই মনটা ভালো হয়ে যায়।
৫. শারীরিক সক্ষমতা ও শক্তি বৃদ্ধি: নিয়মিত যোগাসনের মাধ্যমে পেশিগুলি অনেক বেশি চটপটে ও সহনশীল হয়ে ওঠে। আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি উচ্ছ্বল ও উদ্যমী হয়ে উঠবেন।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম: ইনসমনিয়া বা অনিদ্রার মতো সমস্যা দূর করতে যোগাসন অত্যন্ত কার্যকর। এর নিয়মিত চর্চায় পর্যাপ্ত ঘুম হবে, যা শরীর ও মনকে সতেজ রাখবে।
৭. শারীরিক ভারসাম্য ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ: যোগাসন শরীরের ভারসাম্য বাড়াতে সাহায্য করে এবং এটি আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. নির্দিষ্ট রোগের নিরাময়: সাইনোসাইটিস ও অ্যাজমার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ঘাড়, মাথা, হাত-পা ব্যথা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা এবং কোমরের স্ট্রেচিং করে অঙ্গগুলোকে সচল রাখতেও এর জুড়ি নেই। আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ান ক্রনিক লো-ব্যাক পেইনে আক্রান্তদের নিয়মিত যোগা করার পরামর্শ দিয়েছে।
৯. ব্যথা নিরাময়: ঘাড়, হাঁটু বা পিঠের ব্যথা নিরসনে যোগাসন ওষুধের মতো কাজ করে। ক্রনিক ব্যথা দূর করতেও এটি চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্যতম অংশ হতে পারে।
আত্মার উপলব্ধি ও সুন্দর জীবন:
যোগানুশীলনের ধারাবাহিকতায় যখন অশান্ত মন সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত ও শান্ত হয়ে পড়ে, তখন আমাদের ‘আত্মার’ উপলব্ধি হয়। ধৈর্যসহকারে নিয়মিত যোগাসন চর্চা করে আজকের আধুনিক যান্ত্রিক জীবনেও আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সুন্দর থাকতে পারি। তাই আর দেরি না করে, আজই যোগাসনের পথে পা বাড়ান, জীবনকে নতুন করে উপভোগ করুন!