ভারতের পাঁচটি দীর্ঘতম ট্রেন রুট: পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা ও বিশাল যাত্রাপথ

ভারতের বিস্তৃত ভূখণ্ডে, যেখানে উত্তরে হিমালয় এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর বিরাজমান, সেখানে প্রতিদিন অন্তত ১৩ হাজার ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু, এই বিপুল সংখ্যক ট্রেনের মধ্যে পাঁচটি ট্রেন যেসব রুটে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে, তাদের অধিকাংশের রুট পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে।

১. বিবেক এক্সপ্রেস – ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ ট্রেন রুট
ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ ট্রেন রুট হিসেবে বিবেক এক্সপ্রেসের অবস্থান একেবারে শীর্ষে। দক্ষিণে কন্যাকুমারী এবং উত্তর-পূর্বে আসামকে সংযুক্ত করে এই ট্রেনটি প্রতি সপ্তাহে ৪২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ রুটের এই ট্রেনটির একদিকের যাত্রাপথে সময় লাগে মোট ৮০ ঘণ্টা। এই ট্রেনটি মোট ৫০টি স্টেশনে দাঁড়ায় এবং এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘতম রুটের ট্রেন হিসেবে পরিচিত।

২. হিমসাগর এক্সপ্রেস – কন্যাকুমারী থেকে জম্মু
বিবেক এক্সপ্রেসের পরেই যে ট্রেনটি সবচেয়ে দীর্ঘ রুট অতিক্রম করে তা হলো হিমসাগর এক্সপ্রেস। এটি কন্যাকুমারী থেকে জম্মু ও কাশ্মীর পর্যন্ত ৩৮০০ কিলোমিটার পথ পার করে। ৭৩ ঘণ্টা ৫ মিনিটের এই যাত্রাপথে ট্রেনটি ৭১টি স্টেশনে দাঁড়ায়। এটি বারোটি রাজ্যের উপর দিয়ে চলাচল করে।

৩. ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস – আসাম থেকে মুম্বই
আসামের ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের যাত্রাপথও বেশ দীর্ঘ। এই ট্রেনটি আসামের তিনসুকিয়া থেকে মুম্বইয়ের লোকমান্য তিলক টার্মিনাস পর্যন্ত ৩৫৪৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। এই ট্রেনটির যাত্রাপথ পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, দুর্গাপুর, মালদা, এবং জলপাইগুড়ি হয়ে যায়। এটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে দাঁড়ায়, যা যাত্রার জন্য বেশ সুবিধাজনক।

৪. শিলচর কোয়েম্বাটোর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস
আসামের শিলচর থেকে তামিলনাডুর কোয়েম্বাটোর পর্যন্ত ৩৪৯২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে শিলচর কোয়েম্বাটোর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। ৬৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের যাত্রাপথে এই ট্রেনটি বাংলার খড়গপুর, বোলপুর, মালদা এবং জলপাইগুড়ি হয়ে যায়।

৫. কেরালা সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস
কেরালার তিরুবনন্তপুরম থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত যাত্রা করা কেরালা সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস ভারতের পঞ্চম দীর্ঘতম ট্রেন রুট হিসেবে পরিচিত। মোট ৩৩৯৮ কিলোমিটার পথ এই ট্রেনটি অতিক্রম করে এবং ৫৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে যাত্রাপথ শেষ করে। এই ট্রেনটি ভারতের নটি রাজ্যের মধ্যে দিয়ে চলে।

পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা
উপরের পাঁচটি দীর্ঘ ট্রেন রুটের মধ্যে বেশ কয়েকটি রুট পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে যাতায়াত করে। বিশেষত, পুরুলিয়া, দুর্গাপুর, মালদা, এবং জলপাইগুড়ি স্টেশনগুলো ভারতীয় রেলওয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলির অন্যতম অংশ। এসব রুটে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা দেশের ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্কে অপরিহার্য।

এভাবে, ভারতীয় রেলের দীর্ঘতম ট্রেন রুটগুলো একদিকে যেমন দূরত্বে বিপুল যাত্রাপথ অতিক্রম করছে, তেমনি এগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে মানুষের চলাচলকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করে তুলছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy