ইউটিউব, গুগল ঘেঁটে বা নিত্য-নতুন মুরগির সুস্বাদু রান্না শিখছেন আর প্রায় প্রতিদিনই বাড়িতে বানাচ্ছেন। চিকেন ফ্রাই, চিকেন রোস্ট, চিকেন উইং, চিকেন নাগেটস-এমনই আরও কত কিছু! এ সবের জন্য আজকাল আর রেস্তোরাঁয় যেতে হয় না। বাড়িতেই বানিয়ে ফেলা যায় অনায়াসে! কিন্তু জানেন কি এই ‘চিকেন প্রীতি’ আপনার মারাত্মক বিপদ ডেকে আনছে? অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে ধীরে ধীরে। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস।
তিনি জানান, আসলে ইদানীং আমরা যত মুরগি খাই তার প্রায় সবই আসে কোনো না কোনো পোল্ট্রি খামার থেকে। আর প্রায় সব পোল্ট্রি খামারেই মুরগির স্বাস্থ্য দ্রুত বাড়াতে, বেশি মাংস পেতে মুরগির খাবারের সঙ্গে এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়। এই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যক্ষমতা দিনে দিনে হ্রাস পেতে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় হয়তো অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধই শরীরে কোনো রকম ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে তা ঠেকাতে ব্যর্থ হবে।
অরিন্দম বিশ্বাস জানান, সম্প্রতি লন্ডনের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজিমের চালানো একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারত, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়ার মতো একাধিক দেশে পোল্ট্রি খামারে মুরগির খাবারের সঙ্গে উচ্চ মাত্রায় কোলিস্টিন নামের একটি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। ওই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, বাজারে উপলব্ধ প্রায় সব প্রক্রিয়াজাত মুরগির মাংসেই উচ্চ মাত্রায় কোলিস্টিনের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে বিধি-নিষেধ রয়েছে, তা যে কোনো ভাবেই মানা হচ্ছে না তারই প্রমাণ মিলেছে এই সমীক্ষায়।
কীভাবে এই বিপদ এড়ানো যাবে?
অরিন্দম বিশ্বাসের মতে, দেশের পোল্ট্রি খামারগুলোতে কোলিস্টিনের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে দেশের খাদ্যসুরক্ষা বা স্বাস্থ রক্ষার দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধি বা কর্তাব্যক্তিদের। কিন্তু সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের আগে আমরা নিজেরা একটু সতর্ক হলে বিপদ অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। তাই তার পরামর্শ হল, পেল্ট্রি বা ব্রয়লারের মুরগি যতটা সম্ভব কম খান আর যদি খেতেই হয় ভাল করে ফুটিয়ে, সেদ্ধ করে খাওয়াই ভালো।