জীবনটা যখন বিষণ্নতা আর দুশ্চিন্তার এক নিশ্ছিদ্র জালে আটকা পড়ে, তখন ব্রেন ফগ, মনোযোগের অভাব আর কাজে ফোকাস হারানোর মতো সমস্যাগুলো নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। একসময় আমিও এমনই এক কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। মনে হতো, যেন মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না, সবকিছুই ঝাপসা। কিন্তু সেই আঁধার কাটিয়ে আমি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি, আর এই যাত্রায় আমাকে সাহায্য করেছে সাতটি নির্দিষ্ট অভ্যাস। আপনারাও এই অভ্যাসগুলো রপ্ত করে বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আসুন, জেনে নিই সেই সাতটি অভ্যাসের কথা, যা আপনার জীবনকেও নতুন দিশা দেখাতে পারে:
১. ধ্যানে খুঁজুন প্রশান্তি:
নিয়মিত ধ্যান করা মানসিক চাপ কমানোর এক অব্যর্থ উপায়। এটি কেবল মনে প্রশান্তিই আনে না, বরং আপনার মানসিক সচেতনতাও বৃদ্ধি করে। দিনের কিছু সময় নিজের সঙ্গে কাটানো, নীরবতার গভীরে ডুবে যাওয়া—এগুলো আপনার মনকে কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করবে।
২. সৃজনশীলতায় মন দিন, তৈরি করুন কিছু:
নিজেকে সৃজনশীল কাজে যুক্ত রাখার কোনো বিকল্প নেই। যখন আপনি কেবল চারপাশে যা কিছু আছে, তা ‘কনজিউম’ বা গ্রহণ করতে থাকেন, তখনই দুশ্চিন্তা আপনার মনে জড়ো হতে থাকে। কিন্তু যখন আপনি নিজে কিছু তৈরি করেন—সেটা ছবি আঁকা হোক, লেখা হোক, বা কোনো নতুন কিছু শেখা হোক—তখন দুশ্চিন্তা আপনাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। সৃষ্টির আনন্দই দুশ্চিন্তার সেরা প্রতিষেধক।
৩. মাঝে মাঝে নিজেকে ‘বিযুক্ত’ করুন:
এই ব্যস্ত দুনিয়ায় আমরা সবসময়ই কোনো না কোনো তথ্যের সঙ্গে যুক্ত। সপ্তাহে অন্তত একবার বা দু’বার এমন কিছু সময় রাখুন, যে সময়ে আপনি কিছুই দেখবেন না, শুনবেন না, পড়বেন না, কেবল নিজের ভাবনাগুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দেবেন। নিজেকে মাঝেমধ্যে এভাবে বাইরের কোলাহল থেকে ‘বিযুক্ত’ করলে যেকোনো কিছু অল্প সময়ে অনুধাবন করা সহজ হয় এবং মনের ওপর চাপ কমে।
৪. ব্যায়ামের সঙ্গে সামাজিকতা: ‘হ্যাপি হরমোন’ আনুন:
ব্যায়াম কেবল শরীরের জন্য নয়, মনের জন্যও অত্যন্ত জরুরি। আপনার আশপাশের পার্কে কোনো একটা ব্যায়াম গ্রুপে যোগ দিন। সকালের স্বাস্থ্যকর হাওয়া খাওয়ার পাশাপাশি অন্যদের সঙ্গে সামাজিকীকরণটাও হবে। মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা খুবই জরুরি। যখনই আপনার বিষণ্ন লাগবে, কোনো একজন কাছের মানুষের সঙ্গে গল্প করুন। দেখবেন, অনেকটাই হালকা লাগছে। অন্যের ভালোমন্দের সঙ্গে মিলেমিশে থাকলে নিজের হতাশা, বিষণ্নতা চেপে ধরার সুযোগ পায় না। তা ছাড়া, শারীরিক পরিশ্রম করলে এন্ডোর্ফিন (হ্যাপি হরমোন) নিঃসৃত হয়, যা বিষণ্নতাকে উধাও করে দেয়।
৫. ঘুমের রুটিনকে গুরুত্ব দিন: শান্তির আশ্রয়:
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান, এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। বিছানায় কখনোই ফোন নিয়ে যাবেন না। সন্ধ্যার পর কোনো ক্যাফেইন (চা, কফি) নেবেন না। আপনার বেডরুম যেন ঠান্ডা এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। ঘুমানোর তিন ঘণ্টার ভেতর কোনো ভারী খাবার খাবেন না। ঘুমের এই রুটিন আপনার শরীর ও মনকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করবে।
৬. আপনার ভাবনাগুলো ভাগ করে নিন: বিশ্বস্ত সঙ্গীর সন্ধান:
আপনাকে অবশ্যই মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমাদের নিজেদের মাথার ভেতরকার দুশ্চিন্তা অনেক সময় বাস্তবতার চেয়েও বেশি কষ্ট দেয়। তাই অন্যের সঙ্গে আপনার সমস্যা নিয়ে কথা বললে সেটা আমাদের একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। তবে অবশ্যই সেই মানুষটা সে রকম নির্ভরশীল হতে হবে। আমার ক্ষেত্রে সেই মানুষটা ছিল একজন থেরাপিস্ট। আপনার ক্ষেত্রে পরিবারের কোনো সদস্য, বন্ধু, বা যে কেউ হতে পারে, যাকে আপনি ভরসা করতে পারেন।
৭. নেতিবাচকতাকে ‘না’ বলুন: মনের ভেতরের লড়াই:
প্রতিদিন নেতিবাচক হাজারো চিন্তা আপনার মাথায় উঁকি দেবে। আপনাকে সেগুলো ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। নেতিবাচকতাকে মাথার ভেতর বাসা বাঁধতে দেবেন না। হয়তো এক দিনে এটা হবে না। কিন্তু উপরের ছয়টা বিষয় আপনি যদি মেনে চলেন, তাহলে নেতিবাচকতাকে দূর করার মতো মানসিক অবস্থায় আপনি পৌঁছে যাবেন। মনে রাখবেন, কোনো কিছু থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ফলাফল আশা করবেন না। দুর্ঘটনা হুট করে ঘটে, অপরদিকে, ভালো কিছু ঘটতে সময় লাগে। ধৈর্য ধরুন, আলোর দিকে এগিয়ে চলুন।