বিদ্যুৎ অপচয় রোধে হোন সচেতন! সাশ্রয় করুন অর্থ ও পরিবেশ

বিদ্যুৎ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে অসচেতন ব্যবহারের কারণে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণে বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। একদিকে যেমন বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার, তেমনই বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। তাই বিদ্যুৎ ব্যবহারের পাশাপাশি এর অপচয় রোধ করাও আমাদের সকলের দায়িত্ব। সামান্য সচেতন হলেই আমরা বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে আনতে পারি এবং সাশ্রয় করতে পারি অর্থ ও পরিবেশ। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিদ্যুৎ অপচয় রোধে আমরা কী কী করতে পারি:

টিউব লাইটে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট ব্যবহার করুন: পুরনো ইলেকট্রিক্যাল ব্যালাস্টের পরিবর্তে ভালো মানের ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম আসবে।

ইলেকট্রনিক ফ্যান রেগুলেটর: সাধারণ রেগুলেটরের বদলে ইলেকট্রনিক রেগুলেটর ব্যবহার করলে ফ্যানের গতি নিয়ন্ত্রণে আরও সুবিধা হয় এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।

অপ্রয়োজনীয় চার্জার খুলে রাখুন: দেওয়ালের বিভিন্ন পয়েন্টে অনেক সময় আমরা চার্জার লাগিয়ে রাখি, যা ব্যবহার না করলেও সামান্য বিদ্যুৎ খরচ করে। তাই দরকার না হলে প্লাগ খুলে রাখুন এবং সুইচ বন্ধ করুন।

প্রয়োজন ছাড়া সরঞ্জাম বন্ধ রাখুন: ওভেন, ফ্যান, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহারের প্রয়োজন না হলে অবশ্যই বন্ধ করে রাখুন।

ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ সারান: বিদ্যুতের সংযোগ খারাপ বা ত্রুটিপূর্ণ হলে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হতে পারে। তাই নিয়মিত সংযোগ পরীক্ষা করুন এবং খারাপ সংযোগ দ্রুত সারিয়ে তুলুন।

এনার্জি সেভার বাল্ব ব্যবহার করুন: পুরনো লাইট বাল্বের পরিবর্তে এনার্জি সেভার বাল্ব ব্যবহার শুরু করুন। এগুলো ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে।

ওয়াশিং মেশিনের সঠিক ব্যবহার: ওয়াশিং মেশিন শুধু বিদ্যুৎ নয়, জলেরও অপচয় করে বেশি। তাই ফুল লোড না হলে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করবেন না।

কাপড় শুকাতে প্রাকৃতিক উপায়: ড্রায়ারে বা ফ্যান ছেড়ে কাপড় না শুকিয়ে বারান্দা বা ছাদে মেলে দিন। এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের একটি সহজ উপায়।

রেফ্রিজারেটর ও এসির পরিচর্যা: রেফ্রিজারেটরের কয়েল বছরে অন্তত দু’বার পরিষ্কার করান। এসির ফিল্টারও নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। এতে যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে।

ইস্ত্রি করার অভ্যাস পরিবর্তন: বাড়িতে কাপড় ইস্ত্রি করা কমিয়ে দিন। খুব বেশি প্রয়োজন হলে দোকান থেকে করিয়ে আনতে পারেন।

এসির ব্যবহারে সচেতন হোন: এসি ছেড়ে একটানা না ঘুমিয়ে প্রয়োজনের সময় চালান এবং ঘর ঠান্ডা হয়ে গেলে বন্ধ করে ফ্যান ব্যবহার করুন। কারণ এসিতে ফ্যানের চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎ অপচয় হয়।

জল গরম করার বিকল্প উপায়: জল গরম করতে গিজার বা হিটারের ব্যবহার কমিয়ে দিন। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারলে সবচেয়ে ভালো।

চুল শুকানোর প্রাকৃতিক উপায়: হেয়ার ড্রায়ারের বদলে বাতাসেই চুল শুকিয়ে নিন। এটি বিদ্যুতের অপচয় কমাতে সাহায্য করবে।

ঘর ছাড়ার আগে সুইচ বন্ধ করুন: ঘর থেকে বের হওয়ার সময় লাইট ও ফ্যানের সুইচ বন্ধ করার অভ্যাস তৈরি করুন।

ওভেনের ব্যবহার কমান: ওভেন, বিশেষ করে মাইক্রোওয়েভের ব্যবহার ত্যাগ করুন। রাইস কুকার, কারি কুকার ইত্যাদি একান্ত বাধ্য না হলে ব্যবহার করবেন না।

সাশ্রয়ী ডিম লাইট ব্যবহার করুন: নিয়ন গ্যাসীয় ডিম লাইট ও ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট ডিম লাইটে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এভাবে ডিম লাইট থেকে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।

দিনের আলোর ব্যবহার করুন: ঘরের জানালাগুলো খুলে পর্দা সরিয়ে রাখুন এবং দিনের আলোয় কাজ করার অভ্যাস করুন।

আলোকসজ্জা পরিমিত করুন: বিভিন্ন উৎসব কিংবা অনুষ্ঠানে আলোকসজ্জা কমানোর ব্যবস্থা করুন। এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানেও অতিরিক্ত আলোকসজ্জা এড়িয়ে চলুন।

বর্তমানে অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও অযথা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো এবং রাস্তার বাতি সময়মতো বন্ধ না করার মতো অপচয় দেখা যায়। তাই গৃহস্থালি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হওয়া আমাদের সকলের কর্তব্য। আপনার সামান্য সচেতনতাই পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য বড় অবদান রাখতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy