বিশ্বজুড়ে বিবাহবিচ্ছেদের হার ক্রমশ বাড়ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই হার সবচেয়ে বেশি, যেখানে প্রায় ৪৩-৪৬ শতাংশ বিবাহিত সম্পর্ক ভেঙে যায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই বিবাহবিচ্ছেদের দুই-তৃতীয়াংশই নারীদের ইচ্ছায় ঘটে। বিভিন্ন সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, পুরুষের চেয়ে নারীরাই ডিভোর্সের পথে বেশি হাঁটেন। কিন্তু এর মূল কারণগুলো কী?
গবেষণায় দেখা গেছে, বিয়ের পর নারীদের তুলনায় পুরুষরাই বেশি সুবিধা ভোগ করেন। একজন নারী সন্তান, পরিবার, কর্মক্ষেত্র – সবকিছু সামলে সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। এরপরও যদি স্বামী ও পরিবারের কাছ থেকে কটূ কথা শুনতে হয়, প্রতিবাদ করলেই শুরু হয় অশান্তি। দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে একসময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, সঙ্গী যখন বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন করেন না, তখন নারীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। একজন নারী সর্বদা তার সঙ্গীর কাছ থেকে মানসিক সমর্থন আশা করেন। কিন্তু স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী না চললে অনেক নারী সংসারে উপহাস ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। এই কারণে বহু নারী একাকিত্বে ভোগেন।
বিভিন্ন সামাজিক কারণে নারীরা তাদের ভেতরের কষ্ট সহজে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন না। ফলে তাদের মধ্যে মানসিক ও শারীরিক সমস্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে, যা শেষ পর্যন্ত বিবাহবিচ্ছেদের দিকে ধাবিত করে। নারীদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা বৃদ্ধির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, বর্তমানে নারীরা আর্থিকভাবে পুরুষের উপর নির্ভরশীল নন।
এই আর্থিক স্বাধীনতা নারীদেরকে স্বামীর অবহেলা, প্রতারণা বা অন্য কোনো ক্ষতিকর আচরণ সহ্য করতে আর বাধ্য করে না। বিশ্বাসঘাতকতা, মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হলে নারীরা নিজেরাই বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করেন না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি কোনো নারী তার স্বামীর দ্বারা মানসিক বা শারীরিকভাবে নিগ্রহের শিকার হন, তাহলে বিবাহবিচ্ছেদই তার মুক্তির একমাত্র পথ। তবে অনেক পুরুষ বিবাহবিচ্ছেদ চাইলেও তা দিতে ভয় পান। এর কারণ হলো, প্রথমে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করলে স্ত্রীকে মোটা অঙ্কের অর্থ বা সম্পত্তির ভাগ দিতে হতে পারে। তাই অনেক পুরুষই স্ত্রীর উপর এমন চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে তিনি নিজেই ডিভোর্সের জন্য আবেদন করেন। এতে বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে ঝামেলামুক্ত হয়।
নারীদের এই ক্রমবর্ধমান বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা সমাজে লিঙ্গ সমতা এবং নারীর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।