নখের চারপাশে চামড়া ওঠা একটি অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা, যা আমরা প্রায়শই উপেক্ষা করি। তবে, অনেকেই এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। বিশেষ করে যখন সামান্য ওঠা চামড়া ধরে টান দেওয়া হয়, তখনই বাধে বিপত্তি – ওই স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তীব্র ব্যথা হয়, এমনকি তা সংক্রমণের কারণও হতে পারে। যেহেতু নখের চারপাশে শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু থাকে, তাই এই জায়গা থেকে চামড়া ছিঁড়লে বিপদ আরও বাড়তে পারে।
কেন নখের চারপাশে চামড়া ওঠে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নখের পাশে মরা চামড়া ওঠার কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:
- অপরিষ্কার নখ: নখ নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে এর চারপাশে ময়লা জমে এবং মরা চামড়া ওঠার প্রবণতা বাড়ে।
- শুষ্ক ত্বক: বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, অতিরিক্ত জলের কাজ করা, অথবা ডিটারজেন্টের মতো রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে নখের আশপাশের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, যা চামড়া ওঠার কারণ।
- পুষ্টি ও ভিটামিনের অভাব: শরীরে পুষ্টি, বিশেষ করে ভিটামিন ই, বায়োটিন বা জিঙ্কের মতো ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি দেখা দিলে ত্বক ও নখের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নখের আশপাশে চামড়া ওঠা প্রতিরোধে করণীয়
এই সাধারণ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং এর কারণে হওয়া জটিলতা এড়াতে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলতে পারেন:
১. সাবধানে ছাঁটা: নখের চারপাশে ওঠা চামড়ার অংশটি সাবধানে নেইল কাটার বা ছোট কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন যেন কোনোভাবেই ক্ষতের সৃষ্টি না হয়। টেনে ছেঁড়া থেকে বিরত থাকুন।
২. নিয়মিত নখের পরিচর্যা: নখের পাশের এই চামড়াগুলো মূলত মৃতকোষ। যদি আপনি নিয়মিত নখের পরিচর্যা করেন, তাহলে এই মৃত চামড়া সহজে উঠবে না। অপরিষ্কার নখের পাশেই এই সমস্যা বেশি দেখা যায়, তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।
৩. ভেতরে বেড়ে ওঠা চামড়া: কিছু চামড়া নখের ভেতরেও বেড়ে ওঠে। সেগুলোও সাবধানে ছেঁটে ফেলতে হবে, কিন্তু কখনোই তা টেনে ছিঁড়তে যাবেন না। এতে সেখানে ব্যথা এবং সংক্রমণ হতে পারে।
৪. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: নিয়মিত পরিষ্কার না করলে নখের কোণায় ময়লা জমে যায়। সেক্ষেত্রে হালকা গরম জলে হাত ও পা কিছুক্ষণ চুবিয়ে রেখে তারপর একটি নরম ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এটি চামড়াকে নরম করতেও সাহায্য করবে।
৫. আর্দ্রতা বজায় রাখা: অতিরিক্ত জলের কাজ করার সময় হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করুন। হাত ধোয়ার পর পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার বা ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করুন। এতে নখের আশপাশের ত্বক শুষ্ক হবে না এবং চামড়া ওঠা প্রতিরোধ হবে।
৬. নেইলপলিশ ব্যবহারে সতর্কতা: নেইলপলিশ এবং নেইলপলিশ রিমুভার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। কিছু রাসায়নিক উপাদান নখের আশপাশের ত্বককে শুষ্ক করে তুলতে পারে। ভালো মানের পণ্য ব্যবহার করুন এবং দীর্ঘক্ষণ নেইলপলিশ লাগিয়ে রাখবেন না।
৭. পুষ্টির প্রতি যত্নশীল হন: শরীরের সার্বিক পুষ্টি ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণে সচেতন থাকতে হবে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন এবং প্রয়োজনে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৮. সংক্রমণের ক্ষেত্রে: সাবধান থাকার পরও যদি চামড়া ওঠার কারণে ক্ষত বা ব্যথার সৃষ্টি হয়, অথবা সংক্রমণের কোনো লক্ষণ (যেমন – লালচে ভাব, ফোলা, পুঁজ) দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।
নখের সামান্য এই সমস্যাকে অবহেলা না করে সঠিক পরিচর্যা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আপনি সুস্থ ও সুন্দর নখ পেতে পারেন এবং এর থেকে সৃষ্ট জটিলতা এড়াতে পারবেন।