ঘরের দেয়াল মানেই ক্যানভাস! এই ৬ কৌশলে আপনার ঘর হয়ে উঠুক স্বপ্নের মতো, দূর করুন একঘেয়েমি!

একই রঙের দেয়াল দেখতে দেখতে একঘেয়ে লাগাটা স্বাভাবিক। তবে ঘরের রঙে সামান্য পরিবর্তন আনলে তা শুধু মনের সতেজতাই বাড়ায় না, বরং পুরো ঘরেই নিয়ে আসে এক নতুন প্রাণ। অনেকেই ঘর রং করাকে একটি বিরাট ঝামেলার কাজ মনে করেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সঠিক পরিকল্পনা আর কিছু সহজ কৌশল জানা থাকলে এই ‘কঠিন’ কাজটিও হয়ে উঠবে দারুণ মজার! চলুন জেনে নেওয়া যাক, ঘর রং করার আগে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি, আর কীভাবে আপনার দেয়াল হয়ে উঠবে আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন:

১. প্রথমেই ঘর ‘মুক্ত’ করুন: কাজের সুবিধার জন্য স্থান তৈরি
রং করার আগে ঘরকে পুরোপুরি ফাঁকা করে দিন। বড় আসবাবপত্রগুলো ঘরের মাঝখানে এনে পুরনো কাপড়, কাগজ বা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিন। এরপর দেয়ালের খুঁতগুলো ভালোভাবে ঠিক করা প্রয়োজন। আগের রঙ ঘষে তুলে ফেলুন, এবং দেয়ালের ছোট-বড় যেকোনো গর্ত বা ফাটল ভরাট করে মসৃণ করে নিন। আর রং করার আগে মেঝেতেও খবরের কাগজ বা প্লাস্টিক বিছিয়ে নিতে ভুলবেন না, যাতে রঙের ছিটে লেগে নোংরা না হয়। এই প্রস্তুতি পর্বই আপনার কাজকে অর্ধেক সহজ করে দেবে।

২. আগে একটু পরীক্ষা করে নিন: রঙের আসল সৌন্দর্য চিনুন
আপনি হয়তো সবুজ রং করতে চান, কিন্তু সবুজের তো অসংখ্য শেড! আপনার ঘরে ঠিক কোন শেডটি মানাবে, তা নির্ভর করে ঘরের আকৃতি, আলোর অবস্থান এবং আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের উপর। সময় ও টাকা খরচ করে পুরো ঘর রং করার পর আফসোস করার চেয়ে ভালো, আগে একটি ছোট অংশে সেই রং লাগিয়ে দেখুন তা দিনে বা রাতে কেমন লাগছে। একদিন পর যদি মনে হয় সেটাই আপনার ঘরের জন্য উপযুক্ত, তাহলে সেই রংটাই রাখুন, অথবা অন্য রং পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে একের বেশি রং পরীক্ষামূলকভাবে বেছে নিতে পারেন।

৩. দেয়ালের রঙে রাঙান জীবন: সৃজনশীলতার ছোঁয়া আনুন
সাদা আর ফিকে সাদার ঘেরাটোপে বন্দী না থেকে এবার ঘরের দেয়ালের পাশাপাশি নিজের জীবনও রঙিন করুন! তবে এখানে একটু সতর্ক হতে হবে। যদি ঘর খুব ছোট হয়, আর আপনি পুরো বাড়ি কমলা বা বেগুনী রঙে রাঙান, তাহলে ঘরে একটা বদ্ধ ভাব আসতে পারে। তাই চেষ্টা করুন মিলিয়েমিশিয়ে রং করতে। একটি বা দুটি দেয়াল আপনার পছন্দের গাঢ় রঙে রাঙাতে পারেন, আর ঘরের উজ্জ্বলতা ভারসাম্য রাখতে পর্দা ও অন্যান্য আসবাব হালকা রঙের রাখুন। সব মিলিয়ে, চাইলেই ঘরের দেয়ালের সঙ্গে সঙ্গে জীবনেও রং যোগ করুন। শুধু মনে রাখবেন, রঙের সঙ্গে আসবাব আর পর্দার সামঞ্জস্য যেন হয় একদম ঠিকঠাক, তবেই ঘরে আসবে এক চমৎকার ভারসাম্য।

৪. প্রাইমার অত্যন্ত জরুরি: রঙের দীর্ঘস্থায়ী ভিত্তি
রং করার প্রস্তুতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রাইমিং। প্রাইমার দিলে দেয়ালের যত খুঁত আছে তা ঢাকা পড়ে এবং দেয়ালকে রং বসার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করে। বিশেষত দেয়ালের গর্ত বা ফাটল ঢাকার পরে প্রাইমার দেওয়া অপরিহার্য। প্রাইমার দেওয়ার পর রং এক কোট দিলেও চলে, ফলে রঙের খরচও বাঁচে অনেকটা। এটি রঙের আয়ুও বাড়িয়ে দেয়।

৫. রোলিংয়ের আগে ব্রাশ ব্যবহার করুন: নিখুঁত ফিনিশিংয়ের গোপন কথা
দ্বিধায় না ভুগে সবসময়ই দেয়ালে রোলিং করার আগে ব্রাশ ব্যবহার করুন। বিশেষত মেঝে, ছাদ এবং দেয়ালের কর্ণারসহ যেসব জায়গায় রোলার পৌঁছায় না, সেসব জায়গায় আগে ব্রাশ ব্যবহার করাই ভালো। এতে করে দেয়ালের উপরিভাগ দেখতে মসৃণ লাগবে এবং পুরো কাজটাই হবে নিখুঁত।

৬. সুরক্ষা এবং সতর্কতা: নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন
বাড়িতে যখন রঙের কাজ চলবে, তখন চোখে সেফটি গ্লাস এবং পুরনো কাপড় পরে থাকুন, যাতে রঙের ছিটে না লাগে। শ্বাসযন্ত্রের সুরক্ষার জন্য মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন। সব প্রস্তুতি শেষ হলে আর ভয় কিসের? আজই পরিকল্পনা করুন আপনার বাড়িকে নতুন রঙে রাঙানোর, আপনার নিজস্ব সৃজনশীলতার ছোঁয়ায় ঘর হয়ে উঠুক আপনার মনের মতো!

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy