বাঙালির হেঁশেলে ঘিয়ের স্থান বহু পুরনো। কেবল স্বাদ বাড়াতেই নয়, আয়ুর্বেদ এবং আধুনিক পুষ্টি বিজ্ঞান উভয়ই ঘি-কে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে। বিশেষ করে খালি পেটে ঘি সেবন করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।
মস্তিষ্কের ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি:
পুষ্টিবিদদের মতে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা এবং সচলতা বজায় রাখতে উপকারী ফ্যাটের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। ঘি-তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসেনশিয়াল ফ্যাট, যা মস্তিষ্কের কোষের কার্যকারিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ঘি হলো অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। নিয়মিত ঘি সেবন নিউরনের কার্যকলাপ উন্নত করে এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়ায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী:
অনেকেরই ধারণা, ঘি খেলে ওজন বাড়ে। কিন্তু একাধিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে, ঘি-এ থাকা ‘মিডিয়াম চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড’ (MCFAs) শরীরে জমে থাকা ‘ফ্যাট সেল’ গলাতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন ২ চামচ ঘি খালি পেটে খেতে পারলে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়:
খাবারের সঙ্গে ২-৩ চামচ ঘি খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। ঘি পরিপাকতন্ত্রকে চর্বিমুক্ত করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকেও নির্মূল করতে সাহায্য করে। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে।
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা:
খালি পেটে ঘি খেলে শরীরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে উপস্থিত ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ (LDL) নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। ফলে হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। এটি কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ক্যান্সার প্রতিরোধ:
ঘি-তে রয়েছে K2 এবং CLA (Conjugated Linoleic Acid) নামক দুটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে, এই দুটি উপাদান শরীরের ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানগুলোকে শরীর থেকে বের করে দিয়ে ক্যান্সারের আশঙ্কাও কমিয়ে দেয়।
হাড়ের স্বাস্থ্য ও সচলতা:
খালি পেটে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘি খেলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে যা অস্থিসন্ধির সচলতা বাড়িয়ে তোলে। একই সঙ্গে এটি শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতেও সাহায্য করে। ফলে হাড়ের যে কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশম হয়।
ত্বকের স্বাস্থ্য ও উজ্জ্বলতা:
প্রতিদিন খালি পেটে ঘি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ত্বকের কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যায়। কোলাজেন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে এবং ত্বককে সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে।
এছাড়াও, অ্যালার্জি প্রতিরোধে এবং সর্দি-কাশির কষ্ট কমাতেও ঘি অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। সামগ্রিকভাবে, খালি পেটে সঠিক পরিমাণে ঘি সেবনের অভ্যাস আমাদের শরীরকে বহু দিক থেকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে।