বর্তমান সময়ে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটি কমন অভিযোগ, তা হলো তারা খেতে চায় না। এরা বাসার খাবার খেতে চায় না ঠিকই কিন্তু বাহিরের খাবার খেতে ভালবাসে। যাতে পুষ্টিগুণ তো নেই-ই, উল্টো শিশুদের জন্য তা ক্ষতিকর। এর ফলে কারও ওজন অতিরিক্ত, কারও আবার কম। এই ওজন বাড়া-কমার ক্ষেত্রে প্রয়োজন রয়েছে মনিটরিংয়ের।
বাচ্চাদের ওজন যেভাবে মনিটর করা হয়, একটু বড় হলে ততটা করা হয় না। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলেন, সদ্যোজাত থেকে টিনএজ পর্যন্ত ওজন মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখতে হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাচ্চাদের গ্রোথ চার্ট মেনটেন করা ভীষণ জরুরি। বয়স অনুপাতে শিশুর ওজন ও উচ্চতা নির্দিষ্ট হয়। আপনার সন্তান সেই মাপকাঠির আওতায় আছে কি না, তা বাবা-মা ও ডাক্তারকে খেয়াল রাখতে হয়। সামান্য এদিক ওদিক হতেই পারে। তবে বাবা-মায়েরা সন্তানের কম ওজন নিয়ে চিন্তা করেন বেশি। এক্ষেত্রে ওজন-উচ্চতার ভারসাম্য প্রয়োজন।
দু’বছর পর্যন্ত শিশুর প্রতিমাসেই গ্রোথ চার্ট মনিটর করা জরুরি। তারপর তিন মাস অন্তর অন্তর করলেই চলে। টিনএজারদের ক্ষেত্রে বছরে তিনবার যথেষ্ট। শিশুর গ্রোথ চার্ট ডাক্তার বা শিশু হসপিটালে পাওয়া যায়। এছাড়া ইন্টারনেটেও পাওয়া যায়।
এবার জেনে নেওয়া যাক যেভাবে নজর রাখবেন বাচ্চার সুস্থতার দিকে-
• ছোটরা খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ঝামেলা করবেই। অভিভাবককে খেয়াল রাখতে হবে সন্তান দুর্বল হচ্ছে কি-না সে দিকে। অনেক বাচ্চার ওজন বেশি হলেও কিন্তু সে দুর্বল হতে পারে। শিশু যদি খেলতে না চায় বা অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে, তাহলে চিন্তার বিষয়। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে শরীরে কিছু ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। সে রকম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
• ছোটদের পেট ভরাতে পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার একটু মুখরোচকভাবে তৈরি করে দিলে তারা নিশ্চয়ই খাবে। ছোট থেকে সব ধরনের খাবার খাওয়ানোর অভ্যেস করানো ভাল। এ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও জরুরি। ওরা বড়দের যেমন দেখে, তেমনটাই শেখে।
• শিশুর ওজন-উচ্চতা অনেকটাই নির্ভর করে তার জেনেটিক গঠনের উপরে। কোন শিশুর গড়ন পাতলা বা চিকন, কিন্তু তার উচ্চতা একদম ঠিক। সে ক্ষেত্রে বুঝবেন এটা ওর জেনেটিক গঠন। এরকম বাচ্চাকে অতিরিক্ত খাইয়ে ওজন বাড়ানো হলে পরে তার হাইপার টেনশন, ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
• টিনএজ থেকে বাচ্চাদের ওজন-উচ্চতা অনেকটা হরমোনের উপর নির্ভর করে। হঠাৎ দেখলেন, যে ছেলে বা মেয়েটি দুই/এক বছর আগে ক্ষীণকায় ছিল, সে এখন ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী। আবার এর উল্টোটাও হতে পারে।
• বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্যের গুণাগুণে তারতম্য রয়েছে। সবজি, ফল, মাছ, মাংস- সব খাওয়ানোর পরেও শিশুর পুষ্টিতে ফাঁক থেকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভিটামিন বা ফুড সাপ্লিমেন্টের কথা ভাবা যেতে পারে। অবশ্যই এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সবকিছুর মূলে কিন্তু শিশুর সুস্থতা, ওজন কম হলে যে অসুস্থ আবার ওজন বেশি হলে যে সুস্থ তা বলা যাবে না। কাজেই শিশুর খেলাধূলা, হাঁটা-চলা, ছোটাছুটি মনিটরিং করে খাবারের দিকে নজর দিন।