সুস্থ, ঝলমলে চুলই সৌন্দর্যের মূল চাবিকাঠি। নিষ্প্রাণ, নিস্প্রভ এবং শুষ্ক চুল যেন সমস্ত উৎসবের আনন্দকে ফিকে করে দেয়। আবহাওয়া, তীব্র রোদ, এবং ধুলাবালির প্রভাবে চুলের সতেজ ভাব নষ্ট হয়ে যায়, আর এই সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা। বিশ্বজুড়ে ৩৫ মিলিয়ন পুরুষ এবং ২১ মিলিয়ন নারী এই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন, এবং শুধুমাত্র নারকেল তেল দিয়ে এই সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান বা স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। নারকেল তেলের সঙ্গে প্রয়োজন হয় বাড়তি কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের মিশ্রণ।
কয়েক দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা। এমন উৎসবের সময়ে নিজের যত্নের পাশাপাশি চুলের প্রতি যত্নশীল হওয়াও খুব জরুরি। চুলের হাজারো সমস্যাকে এই ঈদেই বিদায় জানিয়ে দিতে জেনে নিন প্রাকৃতিক উপাদান মিশ্রিত চমৎকার তিনটি তেল তৈরির বিবরণ, যা আপনার চুলকে দেবে নতুন জীবন!
ঈদের আগে চুলের যত্নে ৩টি প্রাকৃতিক তেল:
১. তেজপাতা ও নারকেল তেল: চুল পড়া কমাতে ও গোড়া মজবুত করতে
নারকেল তেল চুলের জন্য সর্বাপেক্ষা উত্তম। এর প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ চুলের গোড়া থেকে পুষ্টি জোগাতে কাজ করে। নারকেল তেলের সাথে তেজপাতা মিশিয়ে ব্যবহারে চুলের গোড়া ভেতর থেকে শক্ত হয়, ফলে চুল পড়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
* তৈরির পদ্ধতি: আধা কাপ নারকেল তেলের সাথে ৮-১০টি তেজপাতা প্রয়োজন হবে। প্রথমে নারকেল তেল গরম করে এতে তেজপাতা দিয়ে ভালোভাবে জ্বাল দিন। তেজপাতা থেকে যখন কালচে রস বের হবে, তখন নামিয়ে তেলটি ঠান্ডা করে নিন।
* ব্যবহার: এই তেল রাতের বেলা চুলের গোড়ায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন এবং পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
২. আমলকী ও নারকেল তেল: নিষ্প্রাণ চুলে প্রাণ ফেরাতে ও চুল কালো করতে
প্রাচীনকাল থেকে চুলের যত্নে ব্যবহৃত আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন। এই সকল পুষ্টি গুণাগুণ নিষ্প্রাণ চুলে প্রাণ ফেরাতে এবং চুলকে প্রাকৃতিকভাবে কালো করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নারকেল তেলের সাথে মেশানোর ফলে আমলকীর গুণাগুণ আরও বহুগুণ বেড়ে যায়।
* তৈরির পদ্ধতি: ২-৩টি আমলকী এবং ৫-৬ টেবিল চামচ নারকেল তেল প্রয়োজন হবে। প্রথমে আমলকী টুকরো করে কেটে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ছেঁকে আমলকীর রস বের করে এতে নারকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
* ব্যবহার: ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরি হয়ে গেলে তেলটি চুলে ব্যবহার করুন।
৩. তুলসি পাতা, মেথি ও নারকেল তেল: চুল শক্ত, কোমল ও অকালপক্কতা রোধে
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তুলসি পাতা বহুল ব্যবহৃত একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা চুল শক্ত করতে, চুল পড়া কমাতে এবং চুলের অকালপক্কতা রোধ করতে অনন্য। অপরদিকে, মেথি চুলকে কোমল ও মসৃণ হতে সাহায্য করে।
* তৈরির পদ্ধতি: এই তেলের মিশ্রণটি তৈরির জন্য ১০-১২টি তুলসি পাতা, আধা কাপ নারকেল তেল এবং ৪-৫টি মেথি লাগবে। প্রথমে তুলসি পাতা বেটে একটি পেস্ট তৈরি করুন। অন্য একটি পাত্রে নারকেল তেল গরম করে এতে তুলসি পেস্ট দিয়ে দিন। কিছুটা গরম হলে মেথি দিয়ে দিন। সকল উপাদান একসাথে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে নামিয়ে ছেঁকে নিন।
* ব্যবহার: এই তেল নিয়মিত ব্যবহারে চুল ভেতর থেকে পুষ্টি পাবে।
এই ঈদে নিজের যত্ন নিন এবং এই প্রাকৃতিক তেলগুলো ব্যবহার করে আপনার চুলকে দিন এক নতুন ঝলমলে আভা! সুস্থ ও সুন্দর চুল নিয়ে উৎসবের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করুন।
