হেডফোন এবং ইয়ারফোন বর্তমানে ছোট-বড় সকলের কাছেই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি প্রযুক্তি। গান শোনা থেকে শুরু করে অনলাইন মিটিং বা ফোনে কথা বলা – সবেতেই এই ছোট্ট গেজেটটি অপরিহার্য। তবে আমরা কি এর ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে অবগত? অনেকেই জেনেও অবাধে এটি ব্যবহার করে চলেছেন। এই ছোট্ট ডিভাইসটি আপনার স্বাস্থ্যের উপর কী কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা জেনে নিন:
১) শ্রবণ জটিলতা: হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহারের সময় সরাসরি অডিও আপনার কানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, ৯০ ডেসিবেল বা তার বেশি মাত্রার আওয়াজ যদি দীর্ঘক্ষণ ধরে আপনার কানে যায়, তাহলে শ্রবণ জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি আপনি চিরতরে আপনার কানের কিছু শোনার ক্ষমতা হারাতে পারেন। তাই হেডফোন ব্যবহার করতেই হলে, আপনার কানকে নিয়মিত বিরতি দিন এবং কখনোই উচ্চ ভলিউমে গান শুনবেন না।
২) কানের সংক্রমণ: আপনার হেডফোন বা ইয়ারফোন কি ব্যক্তিগত? নাকি আপনি অন্যের সাথে ভাগ করে ব্যবহার করেন? যদি তাই হয়, তবে সহজেই কানে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। বিভিন্ন মানুষের কান থেকে ব্যাকটেরিয়া হেডফোনের মাধ্যমে আপনার কানে প্রবেশ করতে পারে। তাই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং নিজের হেডফোন কারো সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। ব্যবহারের আগে ও পরে পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩) বাতাস প্রবেশে বাধা: আধুনিক হেডফোন কোম্পানিগুলো অডিওর গুণগত মানোন্নয়নে মনোযোগ দিলেও, অনেক ইয়ারফোন কানের ছিদ্র এমনভাবে বন্ধ করে দেয় যাতে বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। এর ফলে কানে সংক্রমণ, টিটিনাস এবং শ্রবণ জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘক্ষণ ধরে কান আবদ্ধ রাখলে আর্দ্রতা জমে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।
৪) সাময়িক বধিরতা: এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ ভলিউমে গান শোনেন, তারা হেডফোন খোলার পরেও কিছুক্ষণ ভালোভাবে শুনতে পান না। এমনকি, যদি কেউ ১৫ মিনিটের জন্য ১০০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার শব্দ শোনে, তবে তার সাময়িক বধিরতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ শব্দ শ্রবণ স্থায়ী বধিরতার কারণও হতে পারে।
৫) কানে ব্যথা ও ভোঁ ভোঁ আওয়াজ: যারা অতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহার করেন, তারা প্রায়শই কানে ব্যথা অনুভব করেন। মাঝে মাঝে কানের ভেতরে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ হওয়াও ক্ষতির লক্ষণ। এটি অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে হতে পারে এবং কানের ভেতরের সংবেদনশীল কোষগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে।
৬) মস্তিষ্কের উপর খারাপ প্রভাব: কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, হেডফোনের দ্বারা সৃষ্ট ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক তরঙ্গ মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে যারা ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার করেন, তারা আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। কান সরাসরি মস্তিষ্কের সাথে যুক্ত থাকায়, হেডফোনের ক্ষতিকর প্রভাব মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকেও ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়, যদিও এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
তাই হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, ভলিউম কম রাখুন এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। আপনার শ্রবণশক্তি এবং মস্তিষ্কের সুরক্ষার জন্য এই সতর্কতাগুলো অবলম্বন করা বুদ্ধিমানের কাজ।