অপরাধী শনাক্তকরণে হাতের লেখা পরীক্ষার কথা তো সকলেরই জানা, তবে সম্প্রতি গবেষণা জানাচ্ছে এক নতুন চমকপ্রদ তথ্য। এবার নাকি হাতের লেখা দেখেই চেনা যাবে অসুখ! এমন সাতটি রোগ রয়েছে যা হাতের লেখার মাধ্যমে সহজেই শনাক্ত করা যেতে পারে। আপনার হাতের লেখাই বলে দিতে পারবে আপনি সেই বিশেষ রোগে আক্রান্ত কিনা। আসুন, দেখে নেওয়া যাক সেই ৭টি অসুখ যা অনায়াসেই আপনার হাতের লেখার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
১. অ্যালজাইমার: এটি একটি ভুলে যাওয়ার রোগ, যা সাধারণত বয়স বাড়লে হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাগজে লিখে অথবা মোবাইল ফোনে রিমাইন্ডার অপশন ব্যবহারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাজ মনে রাখার চেষ্টা করেন। তাদের হাতের লেখা সাধারণত বেশ ছোট এবং আবদ্ধ হয়ে থাকে। লেখার অক্ষরগুলো একটির ওপর আরেকটি চেপে থাকার প্রবণতা দেখা যায়।
২. ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ): উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের হাতের লেখা অন্যদের থেকে অনেকটা আলাদা হয়। অতিরিক্ত চিন্তা করার পর যদি রক্তচাপ বাড়ে, তাহলে হাতের লেখার ধরনে খানিকটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। লেখার গতি কমে যাওয়া বা অক্ষরগুলো আঁটসাঁট হয়ে যাওয়ার মতো পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
৩. সিজোফ্রেনিয়া: এই রোগীদের হাতের লেখা অন্যদের থেকে কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই হাতের লেখার ধরণেও পরিবর্তন আসে। লেখার আকার, গতি এবং শব্দগুলির মধ্যে অস্বাভাবিক ফাঁক লক্ষ্য করা যেতে পারে।
৪. গর্ভবতী: গবেষকরা এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। কোনো নারী গর্ভবতী কিনা, তা ৭২ ঘণ্টা কাটার আগেই নাকি তার হাতের লেখা দেখে জানতে পারা যায়! গর্ভবতী নারীর হাতের লেখায় ছোট হাতের ‘a’, ‘o’, ‘p’, ‘f’, ‘g’, ‘y’ – এই অক্ষরগুলির মধ্যে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অক্ষরের আকার সামান্য বড় হতে পারে অথবা লেখার ধরনে অন্য কোনও সূক্ষ্ম পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
৫. ডিসলেক্সিয়া: ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের হাতের লেখা শৈশব থেকেই কিছুটা অস্পষ্ট হয়ে থাকে। বাবা-মায়েরা শত চেষ্টা করার পরেও তাদের হাতের লেখার তেমন পরিবর্তন ঘটাতে পারেন না। এই ধরনের রোগীদের ছোট হাতের ‘d’, ‘q’, ‘b’ এবং ‘p’ – এই অক্ষরগুলো লিখতে প্রায়শই দ্বিধা দেখা যায় এবং তারা এই অক্ষরগুলো গুলিয়ে ফেলেন।
৬. বিষণ্ণতা: আনন্দ কিংবা বিষাদ – দুটো ভিন্ন অনুভূতিই হাতের লেখার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যখন কেউ আনন্দিত থাকে, তখন তার হাতের লেখার মধ্যে একটি স্বাভাবিক গতি থাকে। কিন্তু দুঃখ বা বিষণ্ণতায় ভুগলে সেই গতি নষ্ট হয়ে যায়। আনন্দিত থাকার সময় ছোট হাতের ‘t’-এর উপরের অংশ অনেকটা প্রসারিত হয়ে থাকে, কিন্তু দুঃখের সময় তা ছোট হয়ে যায়। এছাড়াও, ছোট হাতের ‘i’-এর ডট এবং ‘f’, ‘t’-এর ক্ষেত্রে মাথার বারগুলিও ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ছোট হাতের a, n, o, w, g, p, y প্রভৃতি লেখার মধ্যেও কিছু পার্থক্য দেখা যায়।
এই গবেষণা নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং হাতের লেখা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে, শুধুমাত্র হাতের লেখার ওপর ভিত্তি করে কোনো রোগ নির্ণয় করা উচিত নয়। এই পরিবর্তনগুলি লক্ষ্য করা গেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।