শারীরিক গঠন মনের ওপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শারীরিক গঠন ফিট না থাকলে মন খারাপ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ঝুলে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। অল্প বয়সেই অনেক নারী এই সমস্যায় পড়েন, যার পেছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান। তবে সঠিক কারণ ও সমাধান জানা থাকলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
স্তন ঝুলে যাওয়ার কারণসমূহ:
শারীরিক গঠনের পরিবর্তন: শরীরের আকৃতির আকস্মিক পরিবর্তন, অর্থাৎ মোটা থেকে রোগা হওয়া বা রোগা থেকে মোটা হওয়ার কারণে স্তনের আকারে পরিবর্তন আসে এবং তা ঝুলে যেতে পারে।
অতিরিক্ত ব্যায়াম: অনেক সময় ভুল পদ্ধতিতে বা অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে স্তনের টিস্যু দুর্বল হয়ে ঝুলে যেতে পারে।
সন্তান জন্মদান: গর্ভাবস্থায় স্তনের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বড় হয়ে যায়। প্রসবের পর স্তনের আকার ছোট হয়ে গেলে তা ঝুলে যেতে পারে।
বড় ও ভারী স্তন: স্বাভাবিকভাবেই যাদের স্তনের আকার বড় ও ভারী, মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে তাদের স্তন ঝুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, যা স্তন ঝুলে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
অপ্রতুল স্তন-সার্পোট: সঠিক মাপের ও সাপোর্ট দেয় না এমন ব্রা পরিধানের কারণে স্তনের টিস্যু দুর্বল হয়ে ঝুলে যেতে পারে।
ধূমপান: ধূমপান ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন নামক প্রোটিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে স্তন ঝুলে যেতে সাহায্য করে।
যদি আপনার স্তন ঝুলে গিয়ে থাকে, তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কিছু সহজ উপায়ের মাধ্যমে স্তনকে আগের আকারে ফিরিয়ে আনা বা আরও ফিট রাখা সম্ভব। নিচে কয়েকটি কার্যকরী উপায় আলোচনা করা হলো:
ঝুলে যাওয়া স্তনকে ফিট রাখার উপায়:
সঠিক ব্রা ব্যবহার: আপনার স্তনের সঠিক সাপোর্ট নিশ্চিত করে এমন ব্রা পরিধান করা অত্যন্ত জরুরি। ব্রা কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তা কাঁধ থেকে না পড়ে যায় এবং অতিরিক্ত টাইট বা ঢিলেঢালা না হয়। পুরাতন ব্রা পরে স্তনের ঠিক নিচের মাপ নিয়ে সঠিক সাইজের ব্রা নির্বাচন করুন।
মেডিসিন বল স্ল্যাম:
দাঁড়িয়ে দুই হাতে একটি মেডিসিন বল মাথার উপরে ধরুন।
হাঁটু সামান্য ভাঁজ করে বলটিকে সজোরে মাটিতে আছড়ে ফেলুন।
পুনরায় বলটি তুলে তিন সেটে মোট তিনবার এই ব্যায়ামটি করুন।
বল মাটিতে আছাড় মারার সময় বুকের পেশীতে চাপ পড়বে, যা পেশীকে টোন করতে সাহায্য করবে।
পুশ আপস:
উপুড় হয়ে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন এবং হাতের পাতা বগলের পাশে মেঝেতে রাখুন।
পেট টান করে হাতের ওপর ভর দিয়ে শরীরকে উপরের দিকে ঠেলুন।
যতবার সম্ভব পুশ আপ করুন। নিয়মিত এই ব্যায়াম স্তনের পাশাপাশি কাঁধের পেশীকেও শক্তিশালী করে।
ট্রাইসেপ ডিপস:
একটি বেঞ্চে বসুন এবং হাত দুটি শরীরের পাশে রাখুন। পা ছড়িয়ে টান করে রাখুন।
হাত আগের জায়গায় রেখে বেঞ্চ থেকে নিজেকে সামান্য উপরে তুলুন।
কনুই ভাঁজ করে শরীরকে ধীরে ধীরে মেঝের কাছাকাছি নিয়ে যান।
যতক্ষণ সম্ভব এই অবস্থানে থাকুন এবং ধীরে ধীরে আগের অবস্থানে ফিরে যান। নিয়মিত এই ব্যায়াম বুকের পেশী ও হাতের মাসলকে টোনড রাখে।
ডাম্বেল ফ্লাইস:
সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন এবং হাঁটু ভাঁজ করে রাখুন।
দুই হাতে দুটি ডাম্বেল ধরে কনুই সামান্য ভাঁজ করে বুকের কাছে আনুন।
আস্তে আস্তে হাত দুটিspread করে সোজা করে খুলুন।
ধীরে ধীরে আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনুন। এই ব্যায়াম বুকের পেশীকে টান করে ঝোলা স্তনকে শেপে ফেরাতে সাহায্য করে।
মেডিসিন বল পুশ আপস:
পুশ আপের অবস্থানে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন, তবে এবার মাটিতে হাত না রেখে একটি মেডিসিন বলের ওপর রাখুন। অন্য হাতটি মেঝের উপর আধা মিটার দূরত্বে রাখুন।
সাধারণ পুশ আপের মতো করে ব্যায়ামটি করুন।
১০-২০ বার করে তিনটি বা চারটি সেটে এই ব্যায়ামটি সম্পন্ন করুন। এটি ঝুলে যাওয়া স্তনকে টোনড ও ফিট করার জন্য একটি কার্যকর ব্যায়াম।
সুতরাং, শারীরিক গঠন ফিট না থাকলে মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক হলেও, সঠিক পরিচর্যা ও ব্যায়ামের মাধ্যমে স্তনের ঝুলে যাওয়া সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আজ থেকেই এই ব্যায়ামগুলো শুরু করে নিজের শরীরকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলুন।