বিয়ে দুটি মানুষের মধ্যে একটি দৃঢ় বন্ধন, যেখানে তারা একসঙ্গে জীবনের পথে যাত্রা শুরু করেন। এই পথচলা তখনই মধুর হয় যখন বিশ্বাস, আবেগ-অনুভূতি এবং একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতা থাকে। সুখে-শান্তিতে থাকার জন্যই মানুষ বিবাহিত জীবন বেছে নেয়, কিন্তু অনেকে কেবল সুখের আশায় থাকেন, এর জন্য কী করণীয় তা ভেবে দেখেন না। যদি আপনি বিবাহিত জীবনে সুখী হতে চান, তবে এই বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন:
১. সঠিক জীবনসঙ্গী নির্বাচন: চেতনা ও জীবনদৃষ্টির মিল
প্রতিটি মানুষই আলাদা। তবে, এমন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করুন যার চেতনা ও জীবনদৃষ্টির সঙ্গে আপনার মিল রয়েছে। এই মৌলিক সাদৃশ্য সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত করে।
২. দায়িত্ব ও কর্তব্যের গুরুত্ব
প্রেমের সম্পর্কে দায়-দায়িত্ব নাও থাকতে পারে, কিন্তু বিয়ে হলো দেওয়ার ও নেওয়ার এক ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক। বিবাহে দায়িত্ব ও কর্তব্য দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধতা সম্পর্ককে টেকসই করে।
৩. প্রতিদিন নতুন করে প্রেমে পড়ুন
বিয়ে হোক প্রতিদিন একই ব্যক্তির সঙ্গে। অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের নিত্য নতুন প্রেমে পড়ুন। সম্পর্কের সজীবতা ধরে রাখতে এটি খুবই জরুরি।
৪. ভালোবাসার প্রকাশ: প্রতিদিন ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলুন
জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনীকে বিয়ের প্রথম দিন থেকেই দিনে অন্তত একবার বলুন, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ এই ছোট্ট বাক্যটি দুজনের মধ্যে নির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে।
৫. কার্যকর যোগাযোগ ও সম্মান
সম্পর্কের উন্নয়ন নির্ভর করে কথা বলা ও যোগাযোগের উপর। খেয়াল রাখুন কখন, কাকে, কোন অবস্থায় কী বলছেন। যত সুন্দরভাবে ও শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনার কথা বলবেন, ততো আপনার কথার প্রভাব বাড়তে থাকবে এবং সম্পর্ক গভীর হবে।
৬. ইতিবাচক ধারণা লালন করুন
পারস্পরিক ইতিবাচক ও ভালো ধারণাগুলোকে সব সময় লালন করুন। এর ফলে বাস্তবেও আপনাদের সম্পর্ক ইতিবাচক থাকবে। একে অপরের ভালো গুণগুলো দেখতে শিখুন এবং সেগুলো নিয়ে কথা বলুন।
৭. পারিবারিক ভারসাম্যের চারটি খুঁটি
জৈবিক, বংশধারা, হৃদয়িক এবং আত্মিক-আধ্যাত্মিক – এই চারটি খুঁটি পারিবারিক ভারসাম্য রক্ষা করে। এই প্রতিটি দিকে মনোযোগ দিলে পারিবারিক জীবন সামগ্রিকভাবে উন্নত হয়।
৮. সমালোচনা নয়, বোঝান
স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারে অহেতুক খুঁতখুঁতে হবেন না। কঠোর ভাষায় কখনও তার ভুল ধরিয়ে দেবেন না। ভুলগুলোকে সময়-সুযোগমতো সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিন। এতে সম্পর্ক মধুর থাকবে এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা অটুট থাকবে।
৯. পার্থক্যকে মেনে নিন, মতৈক্য গড়ে তুলুন
একজন পুরুষ ও একজন নারী (বা দুজন একই লিঙ্গের মানুষ) চিন্তায় কখনো এক হয় না। তাই পার্থক্যগুলো বাদ দিয়ে সাধ্যমতো মতৈক্যের সৃষ্টি করুন। ভিন্নতাকে সম্মান করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা জরুরি।
১০. বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততা: স্বর্গীয় আনন্দের উৎস
বিশ্বাস, বিশ্বস্ততা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা বিবাহিত জীবনে স্বর্গীয় আনন্দ নিয়ে আসে। এই গুণগুলোই একটি সম্পর্ককে অটুট ও সুন্দর রাখে।
১১. শোভন আচরণ ও আকর্ষণ নিয়ন্ত্রণ
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণকে নিয়ন্ত্রণ করুন। একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মধ্যে শোভন আচরণের সীমাকে বজায় রাখুন। এটি দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতি বিশ্বস্ততা ও সম্মান বজায় রাখতে সাহায্য করে।
১২. অহংকার নয়, অংশীদারিত্ব
আপনার স্বামী/স্ত্রীর চেয়ে নিজেকে ডিগ্রি, সামাজিক মর্যাদা বা বিত্তবৈভবে শ্রেষ্ঠ মনে করবেন না। বিবাহিত জীবনে একজন আরেকজনের অংশীদার। আপনার সাফল্যে স্বামী/স্ত্রীর যে কোনো ভূমিকা অকপটে স্বীকার করুন। বর্তমানকে নিয়ে বাঁচুন, অতীতের কষ্ট বা অপ্রাপ্তি নিয়ে আফসোস না করে বর্তমানকে আনন্দময় করে তুলুন। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করুন।
রূপের প্রশংসা সাময়িক, গুণের কদর চিরন্তন। তাই গুণকে বিকশিত করুন, পরিবারে ও পরিবারের বাইরে আপনার মর্যাদা বেড়ে যাবে। কোনো প্রতিদানের আশা ছাড়াই স্ত্রী/স্বামীর কাছে নিজেকে উজাড় করে দিন। বিনিময়ে আশাতীত প্রতিদান পাবেন। নিঃশর্ত সম্পর্ক যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে, তা ধমক, চাবুক, তলোয়ার বা কোনো চুক্তিনামা দিয়ে অর্জন করা যায় না।