জীবনে সাফল্য অর্জনে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা অনস্বীকার্য। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা এবং বিশ্বজুড়ে সফল ব্যক্তিত্বদের স্বীকারোক্তি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে: আপনার জীবনসঙ্গীর সহযোগিতা, বিশ্বাস এবং অনুপ্রেরণাই হতে পারে সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। প্রচলিত প্রবাদ ‘প্রতিটি সফল পুরুষের পেছনে একজন নারী থাকেন’—এই কথাটি এখন বৈজ্ঞানিক সমর্থনও পাচ্ছে।
কার্নেগি মেলনের গবেষণা: যখন ভালোবাসা আনে বিজয়
যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যুগান্তকারী গবেষণা এই ধারণাকে বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, একজন সহযোগী জীবনসঙ্গী (স্বামী বা স্ত্রী যেই হোক না কেন) তার সঙ্গীকে জীবনে অধিকতর সাফল্য অর্জনে সাহায্য করে। ১৬৩ দম্পতির উপর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একটি সাধারণ ধাঁধা সমাধান করতে দেওয়া হয় এবং বিজয়ীদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, যেসব স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে পুরস্কার জেতার জন্য পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সেসব স্বামীরা সফলভাবে ধাঁধার সমাধান করতে পেরেছেন। অন্যদিকে, যেসব স্ত্রীরা পুরস্কারের বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন বা স্বামীকে সহযোগিতা করেননি, তাদের স্বামীরা পিছিয়ে পড়েছেন।
ছয় মাস পর একই দম্পতিদের পুনরায় পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখেন, যারা পুরস্কারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন, তারা যারা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাদের তুলনায় বেশি সফলতা অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, গবেষকরা দাবি করেন যে, সফল দম্পতিরা অন্যদের চেয়ে বেশি সুখী ও সুস্থ জীবন যাপন করছেন।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সমর্থন: সাফল্য একা নয়
সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরাও পৃথক গবেষণা চালিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, একজন ব্যক্তির সাফল্য কেবল তার নিজের উপর নির্ভর করে না, তার জীবনসঙ্গীও এক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করেন। এটি প্রমাণ করে যে, জীবনের চলার পথে একজন সঙ্গীর মানসিক সমর্থন ও পারস্পরিক বোঝাপড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব নেতাদের কণ্ঠে একই সুর: অনুপ্রেরণার গল্প
বিশ্বজুড়ে অনেক সেলিব্রিটি ও মহান নেতা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, তাদের জীবনসঙ্গী তাদের সাফল্যে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বরাবরই তার সফলতার পেছনে স্ত্রী মিশেল ওবামার সহযোগিতার কথা বুক ফুলিয়ে বলেছেন। তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন যে মিশেলের সমর্থন ছাড়া তার পক্ষে এই উচ্চতায় পৌঁছানো সম্ভব হতো না।
২০১৭ সালে হার্ভার্ডের সূচনা বক্তৃতায় ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গও তার সাফল্যের মূল কারিগর হিসেবে স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানকে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, প্রিসিলা সামাজিক বিভিন্ন কাজে তার সঙ্গে স্বেচ্ছায় কাজ করেন এবং তাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেন। মার্কের জীবনের সফলতার পেছনে প্রিসিলার অবদান বিরাট বলে তিনি সকলকে জানান।
এই গবেষণা এবং বিশ্বজুড়ে সাফল্যের এই গল্পগুলো এটাই প্রমাণ করে যে, স্বামী-স্ত্রী দুজনের সাফল্য একে অপরের উপর নির্ভরশীল। পারস্পরিক বিশ্বাস, ভালোবাসা, ভরসা এবং অকুণ্ঠ সমর্থনই একটি সম্পর্ককে শুধু সুখী করে তোলে না, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের দ্বার খুলে দেয়। তাই, সঙ্গীর প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং তাকে অনুপ্রাণিত করা—এগুলো কেবল ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি আপনার নিজের সাফল্যেরও এক নিশ্চিত পথ।