সম্পর্কের ফাঁদ, পরনির্ভরশীলতা কিভাবে কেড়ে নেয় ভালোবাসার সৌন্দর্য?

সম্পর্ক মানেই একে অপরের ওপর আস্থা রাখা, ভালো-মন্দ সময়ে পাশে দাঁড়ানো এবং নির্ভয়ে সব কথা বলতে পারা। কিন্তু এই নির্ভরশীলতা যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন তা ভালোবাসার সম্পর্ককে পরিণত করতে পারে এক বোঝা এবং বিরক্তির কারণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা সম্পর্কের আসল আনন্দটাই কেড়ে নেয়। আপনার কাছে যা হয়তো সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা, অপরজনের কাছে তা-ই বাড়তি দায়িত্বে পরিণত হয়, যা একটা সময় পর বিরক্তি এবং অশান্তি বাড়ায়।

কীভাবে বুঝবেন যে আপনি পরনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন? চলুন, জেনে নেওয়া যাক কিছু লক্ষণ:

১. সঙ্গীর মেজাজের ওপর আপনার অনুভূতি নির্ভরতা
যদি আপনার যেকোনো অনুভূতি সঙ্গীর মেজাজের ওপর নির্ভর করে, তাহলে বুঝবেন আপনি পরনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন। সে খুশি থাকলে আপনিও খুশি, সে যদি মুখ গোমড়া করে বসে থাকে তবে আপনারও মুখ গোমড়া হয়ে যায় – এসব লক্ষণ মোটেই স্বাভাবিক নয়। দুজন মানুষের সমস্ত ভালোলাগা-মন্দলাগা এক হবে না, এটাই স্বাভাবিক। কোনো বিষয়ে মন খারাপ হলে তা সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ করুন, সঙ্গীর মুডের ওপর ভরসা করে থাকবেন না। সব মানুষের মতো আপনারও নিজস্বতা রয়েছে, আর সেই অস্তিত্ব কোনোভাবেই হারাতে দেবেন না। নিজের মতো করে বাঁচতে শিখুন।

সঙ্গীর মুখ গোমড়া দেখলেই আপনারও মুখ গোমড়া করে বসে থাকার দরকার নেই। এর বদলে তাকে এই পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার উপায় বলুন, তার জন্য এমন কিছু করতে পারেন যাতে তার মুখে হাসি ফোটে। এতে দুজনেই নিজস্বতা নিয়ে বাঁচতে পারবেন এবং সম্পর্কও পাবে ভিন্ন মাত্রা।

২. আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না চাওয়া
এই প্রবণতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়। স্বামী যদি মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করে, তখন স্ত্রী কোনো কাজ করতে চায় না। স্বামীর ভালো আয় আছে বলেই নিজে অকর্মণ্য থাকাটা মোটেই কাজের কথা নয়। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের আর্থিক স্বাধীনতার কথাটাও ভাবতে হবে।

আপনার যদি যোগ্যতা থাকে, তবে নিজেই কিছু একটা করার চেষ্টা করুন। তাতে আপনার নিজের একটি পরিচয় তৈরি হবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সুযোগ থাকতেও পরনির্ভরশীল হয়ে থাকাটা নিশ্চয়ই কাজের কথা নয়। বরং, আর্থিকভাবে দুজনেই স্বচ্ছল থাকলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা সহজ ও সুন্দর হবে।

৩. একা কোনো কাজই করতে না পারা
ব্যাংকের কাজ হোক কিংবা বাজার করা, সবকিছুতেই কি আপনার সঙ্গীকে প্রয়োজন? এমনটা হলে দুজনেরই সময় নষ্ট হবে। বরং কিছু বিশেষ কাজ ছাড়া অন্য সব কাজ দুজনে ভাগ করে নিন। তাতে দুজনেরই সময়টা কাজে লাগবে এবং অনেকটাই বাঁচবে। সবকিছুতে এভাবে সঙ্গীর সঙ্গে ‘লেপ্টে থাকা’ পরনির্ভরশীলতার অন্যতম উদাহরণ।

আপনি যদি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, তবে তা একটা সময় আপনার আত্মবিশ্বাস একেবারে ভেঙে ফেলবে। নিজস্বতা বজায় রাখতে কিংবা আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পরনির্ভরশীলতা থেকে দূরে থাকুন। অন্যথায় ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়তেই থাকবে।

৪. ছোটখাটো কোনো সিদ্ধান্তও নিজে নিতে না পারা
এটা ঠিক যে দুজন মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে সেই সংসার বেশি সুখের হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, প্রতিটি ছোটখাটো সিদ্ধান্তও তাকে জানিয়ে তারপর নিতে হবে। বরং আপনার কাছে যেটি ভালো এবং ঠিক মনে হয়, সেটি করতে পারেন। সবকিছুতে সঙ্গীর মতামত নিতে শুরু করলে সম্পর্কে এক ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকবে।

নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে না পারার মানে হলো আপনার বয়স বাড়লেও মানসিক পরিপক্কতা আসেনি। আপনি যদি নিজেই নিজের ওপর আস্থা রাখতে না পারেন, তবে আপনার সঙ্গী কী করে আপনার ওপর আস্থা রাখবে? তাই নিজের ও সম্পর্কের ভালো চাইলে পরনির্ভরশীলতার স্বভাব কমিয়ে আনুন এবং নিজস্বতা বজায় রেখে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করুন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy