সম্পর্ক যেন এক সযত্নে তৈরি করা ঘরবাড়ি; কখন যে তাতে ফাটল ধরে, নোনা লাগে, তা বলা কঠিন। আচমকা দেখা যায় পলেস্তারা খসে পড়ছে, আর তখন শত চেষ্টাতেও ভাঙন ঠেকানো যায় না। অবধারিত আসে বিচ্ছেদ আর তার তীব্র যন্ত্রণা। কিন্তু এই পরিণতি কি এড়ানো সম্ভব নয়? প্রাত্যহিক জীবনের ব্যস্ততায় আমরা হয়তো নিজেদের সম্পর্কের দিকে গভীরভাবে তাকানোর ফুরসত পাই না। আর এখানেই ঘটে আসল ভুল। তাই, গোড়াতেই সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আজকের কর্পোরেট জীবনে পরকীয়ার ঘটনা ক্রমবর্ধমান। আইনি পদক্ষেপ নেওয়া গেলেও, সম্পর্কের কাচে একবার ফাটল ধরলে তা আর জোড়া লাগে না। তাই, সম্পর্ক বাঁচাতে চাইলে, তার ভাঙনের লক্ষণগুলি আগে থেকেই জেনে রাখা উচিত। আপনার সঙ্গী পরকীয়ায় লিপ্ত কিনা, তা বোঝার জন্য এখানে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
১. আকস্মিক ব্যবহারে পরিবর্তন: আপনার খুব চেনা, কাছের মানুষটির আচরণে যদি হঠাৎ কোনো বড় পরিবর্তন আসে, তবে তা সন্দেহের কারণ হতে পারে। যিনি সবসময় পারিবারিক বিষয়ে জড়িয়ে থাকতেন, তিনি যদি হঠাৎ উদাসীন হয়ে পড়েন, বা উল্টোটা, যিনি এতদিন উদাসীন ছিলেন, তিনি যদি হঠাৎ পারিবারিক বিষয়ে অতিরিক্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন—তবে বুঝতে হবে তাঁর জীবনে নতুন কোনো ঘটনা ঘটছে। সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণই এই ব্যবহারিক পরিবর্তনকে আপনার গোচরে আনতে পারে।
২. সঙ্গীর সঙ্গে কম সময় কাটানো: সাধারণত হতাশা, একাকীত্ব, একঘেয়েমি বা যৌন জীবনে অপূর্ণতাবোধ থেকেই মানুষ চলমান সম্পর্কে থেকেও নতুন সম্পর্কের দিকে ঝুঁকতে পারে। তাই, যদি দেখেন আপনার সঙ্গী আপনার সঙ্গে সময় কাটানো কমিয়ে দিয়েছেন, তবে বুঝতে হবে এই সমস্যাগুলির কোনো একটি তাঁকে গ্রাস করেছে। সেখান থেকেই নতুন সম্পর্কের অঙ্কুরোদগমের সম্ভাবনা থাকে।
৩. অস্বাভাবিক গোপনীয়তা: অত্যন্ত প্রত্যাশিতভাবেই কেউ তার পরকীয়া সম্পর্ক পরিবারের সামনে আনতে চান না। তাই, যদি দেখা যায় আপনার সঙ্গী সাধারণ বিষয়গুলোও আপনার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখছেন, তবে তাঁর পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। অন্যের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অপরাধবোধ থেকেও অনেকে সব কিছু গোপন করার প্রবণতা দেখান।
৪. সন্দেহজনক ফোন ব্যবহার: আপনার সঙ্গী ফোনে কীভাবে কথা বলেন বা কোন স্বরে কথা বলেন, তা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। কিন্তু যদি হঠাৎ করেই তাঁর ফোন ব্যবহারের ধরন বদলে যায়—যেমন, বিশেষ কোনো ফোন কলের সময় তিনি নিচু স্বরে কথা বলছেন বা আড়াল করে রাখছেন, যাতে কেউ তা জানতে না পারে—তবে পরকীয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
৫. ঘনঘন রাত করে ফেরা বা অনিয়মিত ট্রিপ: কোনো পূর্ব পরিকল্পনা বা পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই যদি আপনার সঙ্গী ‘অফিসের কাজ’ বা ‘বিশেষ দরকারে’ ঘনঘন বাইরে যেতে শুরু করেন, এবং দেরিতে বাড়ি ফেরেন, তবে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। সাধারণত কাজের সময় অনুযায়ী বাড়ি ফেরার সময় নির্ধারিত থাকে। দু-একদিন ব্যতিক্রম হতে পারে, কিন্তু ক্রমাগত এই নিয়ম ভাঙতে থাকলে তা পরকীয়ার দিকেই ইঙ্গিত করে।
৬. অকারণ ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রবণতা: আপনি কিছু জিজ্ঞেস না করতেই যদি আপনার সঙ্গী অকারণে কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন, তবে তা একটি সতর্ক সংকেত। আসলে অপরাধবোধ থেকে বা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্যই পরকীয়ায় লিপ্ত ব্যক্তিরা এমনটা করে থাকেন। এ বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা উচিত।
৭. নিজের প্রতি অস্বাভাবিক মনোযোগ: নিজের যত্ন নেওয়া খারাপ কিছু নয়, কিন্তু প্রতিটি মানুষ কতটা নিজের খেয়াল রাখেন, তা তাঁর কাছের মানুষ ভালো করেই জানেন। যদি এই অভ্যাসে হঠাৎ বড় পরিবর্তন আসে, তবে তা ভাবনার বিষয়। এতদিন যিনি যেভাবে পোশাক পরতেন, যা পছন্দ করতেন, তাতে দ্রুত বদল এলে বুঝতে হবে তাঁর মধ্যে বড় পরিবর্তন এসেছে। তিনি হয়তো অন্য কারও পছন্দ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন, এমন অনুমান সহজেই করা যায়।
৮. বিরক্তি ও খিটখিটে মেজাজ: সংসারের দৈনন্দিন চাপ থেকে মেজাজ খারাপ হতেই পারে, যা প্রতিটি সম্পর্কেই দেখা যায় এবং দম্পতিরা নিজেদের মতো করে তা মিটিয়েও নেন। কিন্তু যদি আপনার সঙ্গী আপনার প্রতি ক্রমাগত খিটখিটে ব্যবহার করেন, অকারণে মেজাজ হারান বা বিরক্তি প্রকাশ করেন, তাহলে বুঝতে হবে তিনি হয়তো অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।
অর্থাৎ, মূলত ব্যবহারিক পরিবর্তনটাই এখানে মুখ্য। আচার-আচরণ, রুচি, মেজাজ, এমনকি যৌন জীবনে যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশি ও দ্রুত হারে পরিবর্তন আসে, তবে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার সম্ভাবনা জোরদার। প্রতিটি সম্পর্কে সঙ্গী একে অপরকে যে মাত্রায় চেনেন, সেভাবে অন্য কেউ চেনেন না। তাই স্বাভাবিক প্রবৃত্তিবশেই একজন বুঝতে পারেন, তাঁর সঙ্গী কতটা তাঁর আছেন আর কতটা নেই। এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে হয়তো অনেক সম্পর্ককেই অকালে ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।